পুনর্মিলনীতে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান

ছোটদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র ‘মোটো-পাতলু’র সাজে দুজন। তাঁদের দেখে দারুণ আনন্দিত হয় শিশুরা। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ মাঠে পুর্ণর্মিলনী অনুষ্ঠানে।  ছবি: প্রথম আলো
ছোটদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র ‘মোটো-পাতলু’র সাজে দুজন। তাঁদের দেখে দারুণ আনন্দিত হয় শিশুরা। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ মাঠে পুর্ণর্মিলনী অনুষ্ঠানে। ছবি: প্রথম আলো

ছোটদের জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ ‘মটু-পাতলু’। প্রধান দুই চরিত্র একসঙ্গে হেঁটে বেড়াচ্ছিল মাঠের একপাশে। তাদের ছুঁয়ে দৌড়াচ্ছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। কেউ কথা বলতে চাইছে, কেউ হাত নাড়ছে আবার কেউ জিহ্বা দিয়ে ভেংচি দেখাচ্ছে। হঠাৎ থেমে গেলেন মটু-পাতলুর সাজে সজ্জিত ইব্রাহিম মিয়া ও পারভেজ হোসেন। শিশুরাও জড়ো হতে লাগল। মাঠের ওই অংশটুকু শিশুরাই দখলে নিল।

আনন্দে মেতে ওঠা এসব শিশু এসেছিল তাদের অভিভাবকদের প্রিয় সংগঠন মির্জাপুর এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন (মেকা) আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। মেকার তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। এ অনুষ্ঠানের টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল অধ্যয়নরত-পুরোনোদের মিলনমেলায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। প্রধান অতিথি ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আজিজ আহমেদ। এরপর তিনি ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ বিমান রায় চৌধুরী ও কলেজ প্রিফেক্ট ক্যাডেট মইনুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে খোলা জিপে বর্তমান ও পুরোনো শিক্ষার্থীদের মার্চপাস্ট পরিদর্শন করেন।

সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে প্রথমেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি  দেশের প্রতি সেনাসদস্যদের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সৈনিকেরা ঝুঁকি নিয়ে দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বাইরে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করছেন, এ জন্য সেনাবাহিনী গর্বিত।’ তিনি বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। এখান থেকে সবাই ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বেরিয়ে যান।’

পরে ক্যাডেট কলেজের প্রিফেক্ট ক্যাডেট মইনুল হোসেনের নেতৃত্বে ক্যাডেটরা প্যারেড প্রদর্শনের জন্য মাঠে প্রবেশ করে। সেখানে ক্যাডেট রাফির নেতৃত্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফজলুল হক হাউস, ক্যাডেট মাহিনের নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী হাউস, সাফিনের নেতৃত্বে নজরুল হাউসের শিক্ষার্থীরাসহ অংশগ্রহণকারীরা মার্চপাস্ট প্রদর্শন করেন। ক্যাডেট কলেজের সুসজ্জিত বাদক দলের পর প্রাক্তন ক্যাডেটদের মার্চপাস্ট ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাঁদের দল মার্চপাস্ট করে অভিবাদন মঞ্চ পেরিয়ে যাওয়ার সময় পুরো অনুষ্ঠানস্থল করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। প্রধান অতিথি মার্চপাস্টে অংশগ্রহণকারীদের সালাম নেন।

অনুষ্ঠানে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সোমা মুমতাজ বলেন, ‘পুনর্মিলনী আর বনভোজন হলে সব সময় আমাকে আসতে হয়। এতে খুবই উৎসাহ পাই। আমাদের চেয়ে আমাদের জামাই ও তার বন্ধুরা বেশি উৎসাহ পায়।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক ও ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান মুন্না বলেন, ‘এখানে জুনিয়র আর সিনিয়র কোনো ভেদাভেদ নেই। এখানে মিলনমেলা পরিণত হচ্ছে। এখানে সিনিয়ররা জুনিয়রদের পরামর্শ দেন। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো খুবই মজার।’

মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এন এম ফয়েজুর রহমান। তিনি বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। ফয়েজুরও এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে। এসেছিলেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রফিক কায়ছার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি অধ্যয়নরত প্রাক্তন ক্যাডেট আবুল হোসেনও। দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে সবাই অভিভূত; আনন্দে আত্মহারা। আর বর্তমান শিক্ষার্থীরা বড়দের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ মুবিন, সাভার সেনানিবাসের নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. আকবর হোসেন, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন, সেনাবাহিনীর লজিস্টিক এরিয়া কমান্ডার মোহাম্মদ মোসফেকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান শুরু হয়। আজ শনিবার শেষ হবে।

মেকার সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহ মো. সুলতান উদ্দিন ইকবাল জানান, প্রাক্তন ক্যাডেট, তাঁদের পরিবারসহ প্রায় ৩ হাজার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠান তাঁদের খুবই আনন্দ দিয়েছেন। এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।