'সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে'

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির একটি দল সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির একটি দল সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি বন্ধে ই-জিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করছে কিছু ব্যক্তি। অপরাধীরা সুকৌশলে ই-জিপি প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতি করছে। তাই এ প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর বন্ধ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ রোববার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) একটি দল সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে। তাদের সঙ্গে আলাপের সময় চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, অপরাধীরা সুকৌশলে ই-জিপি প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ করছে। এসব অপরাধীর কারণে একই ঠিকাদার অধিকাংশ সরকারি কাজ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ই-জিপি প্রক্রিয়ায় এ-জাতীয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় দেশের স্বার্থেই এর ফাঁকফোকর বন্ধ করা সমীচীন।

এ বিষয়ে ইউএনওডিসির সহযোগিতা চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব নীতিমালা প্রণয়নে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোকে কীভাবে সংযোজন করা যায়, যাতে পদ্ধতিগতভাবেই দুর্নীতির সুযোগ রুদ্ধ হয়ে যায়—এ বিষয়ে আপনারাও জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা করতে পারেন।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়েই জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেডের সহযোগিতায় দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম, শিক্ষক, সিভিল সোসাইটি, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করের। ২০২১ সালেই এ কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই আগামী বছরেই কমিশনের নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ইউএনওডিসির সহযোগিতার সুযোগ আছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সৃজনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন এই লক্ষ্যমাত্রার ১৬ নম্বর লক্ষ্য অনুসারে সমাজের সর্বস্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রার ৪ নম্বর লক্ষ্য বাস্তবায়নে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সংস্কারে যেমন কমিশন ভূমিকা রাখছে, তেমনি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে মামলা করা হচ্ছে । আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই প্রতিরোধমূলক অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইকবাল মাহমুদ প্রতিনিধিদলটির উদ্দেশে বলেন, ‘কমিশনের কর্মকর্তাদের তদন্ত কর্মকৌশল, জিজ্ঞাসাবাদ কৌশলসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপনাদের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আপনাদের সৃজনশীল এবং বিশ্বব্যাপী অনুসৃত কৌশল আমাদের দেশের অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।’

ইউএনওডিসির প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ড্যানিলো রিজ্জি এ সময় বলেন, ইউএনওডিসি একটি জ্ঞানভিত্তিক সংস্থা। এর বিশাল জ্ঞানভান্ডার রয়েছে। এর মাধ্যমে কমিশনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আজ যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ইউএনওডিসি ও দুদক পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এসব ইস্যুতে কাজ করতে পারে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদকের প্রশিক্ষণ ও আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল।