বিদ্যালয়ের মাঠে ১৮ দোকান

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা সদরে জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অন্তত ১৫ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে ১৮টি দোকান তুলে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু এগুলো উচ্ছেদে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন।

এসব দোকানের কারণে ১৮8 বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটির মাঠে খেলাধুলায় যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি শিক্ষার পরিবেশও ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

১৮৩২ সালে বিদ্যালয়টি প্রায় ১ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে নিম্নমাধ্যমিক থেকে তা উচ্চবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এরপর এ অঞ্চলের কৃতী সন্তান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ জাতীয়করণ হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ অনুমোদিত শিক্ষকের পদ ২১টি। অবশ্য বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮৫০।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পাশে খেলার মাঠটি কেন্দুয়া উপজেলা সদরের প্রবেশদ্বার কেন্দুয়া-আঠারোবাড়ি ও কেন্দুয়া-নেত্রকোনা সড়কের মাথায়। উপজেলা সদরের একমাত্র খেলার মাঠ এটি। স্থানীয় প্রশাসনের আয়োজনে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন জাতীয় খেলাধুলায় এই মাঠ ব্যবহার হয়। তা ছাড়া প্রতিদিনই এই মাঠে খেলাধুলা হয়। কিন্তু বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মাঠ থাকলেও তা দখলের কারণে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাঁচ-সাত বছর ধরে মাঠটিতে দখলপ্রক্রিয়া চলছে। দখলদারদের কারণে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারে না। দোকানগুলোতে গান-বাজনা চলে। এতে পাশে থাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে যেভাবে দোকানপাট গড়ে উঠেছে, তাতে দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে পেছনে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, জাতীয় দিবস উদ্‌যাপনের আগের দিন রাতে দোকানিরা সাময়িক সময়ের জন্য এসব অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে নেন। কিন্তু দিবস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার দোকান স্থাপন করে অবাধে চা-বিস্কুট, পান-সিগারেট বিক্রিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া মাঠের উত্তর পাশে দোকানপাট–সংলগ্ন স্থানে ইজিবাইক, রিকশা ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করায় মাঠের প্রায় চার ভাগের এক ভাগই দখলে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সেখানে খেলার মাঠ দখল করে অবৈধ স্থাপনাসহ ইজিবাইক ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদের দাবি জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদির ভূঁঞা। তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সভার সভাপতি ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম অবৈধ স্থাপনা ও ইজিবাইক-অটোরিকশার স্ট্যান্ড উচ্ছেদের ক্ষেত্রে পৌর মেয়রের সহযোগিতা চান। এ সময় মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল হক ভূঁঞা সহযোগিতা প্রদানে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থাপনাগুলো সরানো হয়নি।

জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. রোকন উদ্দিন খান বলেন, এসব স্থাপনা ও গাড়ির স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে তাঁরা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে আসছেন। খেলার মাঠে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা ও গাড়ি রাখায় খেলাধুলার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মাঠের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম, অষ্টম শ্রেণির হৃদয়, আরিফ হাসানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের মাঠে জায়গা না থাকায় তারা খেলাধুলা করতে পারে না।

দখলদারদের একজন শরিফ মিয়া জানান, তাঁদের কারণে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তাঁদেরও বিকল্প কিছু করার নেই। এখানে দোকান দিয়ে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। অপর দখলদার ফরিদ মিয়া জানান, অন্য সবাই উঠে গেলে তিনিও উঠে যাবেন।

এ বিষয়ে ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, অবৈধ স্থাপনা ও গাড়ির স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব দোকানপাট নিজেদের উদ্যোগে দ্রুত সরিয়ে না নেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।