জমি না পাওয়ায় হচ্ছে না দুটি হাসপাতাল

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা কাটছেই না। ১৩ বছরেও হাসপাতাল দুটির জন্য জমি বরাদ্দ মেলেনি। হাসপাতাল দুটির অস্তিত্ব না থাকলেও পদায়ন করা আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২ জন। তাঁরা নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। এতে শিল্প–অধ্যুষিত ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল দুটি নির্মাণের জন্য কমপক্ষে তিন একর জমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু এখনো জমি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই এক আদেশে নারায়ণগঞ্জ জেলায় তিনটি ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ্ আল বাকী। ওই চিঠিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এবং আড়াইহাজারে ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আড়াইহাজারে ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় লোকজন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। কিন্তু গত ১৩ বছরেও ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের জন্য দুজন মেডিকেল অফিসার, দুজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট দুজন করে চারজনসহ মোট ১২ জন চিকিৎসকের পদ আছে। এসব পদে ১২ চিকিৎসক দীর্ঘদিন এখানে পদায়ন করা ছিলেন। এক মাস আগে পদোন্নতি ও বদলিজনিত কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ছয়জন সংযুক্তিতে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ছয়জন সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্প ও ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ দুটি পৃথক থানা এলাকা। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর বসবাস দুটি থানা এলাকায়। দুই থানার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসার জন্য শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল ও ১৫০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যেতে হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের চিকিৎসার জন্য সেখানে যেতে হয়। অন্যথায় বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। এতে সাধারণ মানুষের সময় ও অর্থ—দুটোই নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, জমি বরাদ্দ দেওয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। জেলা প্রশাসন বলতে পারবে কোথায় সরকারি জমি রয়েছে। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ, জমির বিষয়টি ভালো জানে জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা। তাই জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হলে দ্রুত জমি বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা কাটতে পারে। 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি অবাক করার মতো। দুটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২ চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও ১৩ বছর ধরে জমির অভাবে হাসপাতাল দুটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। অথচ শত শত বিঘা সরকারি জমি বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীদের দখলে আছে। জেলা প্রশাসনের উচিত দ্রুত হাসপাতাল দুটির জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল দুটির জন্য এখনো জমি পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি হাসপাতাল দুটির জন্য জমির ব্যবস্থার করতে।’ তিনি বলেন, ‘জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আমাদের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা সে বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’ 

গত বছরের ১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘১২ বছর ধরে অধিগ্রহণেই আটকা দুই হাসপাতাল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।