কিশোরগঞ্জ হাওরের মানুষ যখন গাড়ি করে বাড়ি যাবে

ফেরি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের সঙ্গে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে গাড়ি যোগাযোগের স্বপ্নপূরণ হলো। জেলা শহরের সঙ্গে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো। গতকাল করিমগঞ্জের বালিখলা ফেরিঘাট এলাকায়। প্রথম আলো
ফেরি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের সঙ্গে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে গাড়ি যোগাযোগের স্বপ্নপূরণ হলো। জেলা শহরের সঙ্গে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো। গতকাল করিমগঞ্জের বালিখলা ফেরিঘাট এলাকায়। প্রথম আলো

একসময় হাওরের মানুষের ভরসা ছিল—‘বর্ষাকালে নাউ আর শুকনায় পাও’। সেই কথা আজ পেছনে ফেলে কিশোরগঞ্জের অবহেলিত হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। গতকাল রোববার থেকে গাড়ি পারাপারের জন্য ফেরি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের সঙ্গে হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো।

কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন ইটনা-বড়ইবাড়ি-চামড়াঘাট সড়কের ধনু নদে চামড়াঘাট ও বড়ইবাড়ি এবং বাউলাই নদে বলদা ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। তা ছাড়া কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়কের ধনু নদে বালিখলা ও বাউলাই নদে শান্তিপুর ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়।

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আয়োজনে গতকাল দুপুরে করিমগঞ্জের বালিখলা ফেরিঘাট এলাকায় এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সাংসদ এবং জাতীয় সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলাম, জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন সুলতানা, ইটনার ইউএনও নাফিসা আক্তার, করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম, সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, ছাত্রলীগের নেতা মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফেরি চলাচলের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। আজ থেকে হাওরবাসীর জন্য নবদিগন্ত ও নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। যোগাযোগ বেহালের কারণে একসময় হাওর এলাকায় মানুষ আত্মীয়তা করতে চাইত না। এই অবহেলিত হাওরে যদি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জন্ম না হতো, হয়তো জীবনেও হাওরের মানুষের এ স্বপ্ন পূরণ হতো না। তাই হাওরবাসীর জন্য আজকের দিনটি একটি স্মরণীয় দিন।

বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে হাওরে প্রথম সাবমার্সিবল (ডুবো) সড়কের স্বপ্ন দেখেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর রাষ্ট্রপতি হাওরের সাবমার্সিবল ও অলওয়েদার (আভুরা) সড়কে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। যা দিয়ে আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গাড়ি দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। একসময় শহর থেকে হাওরে যেতে সারা দিন চলে যেত। এখন করিমগঞ্জ-ইটনা ও মিঠাইন যেতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। অথচ এসব এলাকার মানুষই একদিন দ্বীপের মতো বাস করত।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ বলেন, ‘আজ আমি শহর থেকে গাড়িতে করে বাড়ি যাব, এটা নিজের কাছেই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। তাই আজকের দিনটা ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।’ তিনি ফেরিতে ট্রাক্টরসহ ভারী যানবাহন না তোলার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রধান অতিথি মুজিবুল হক বলেন, একসময় ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মানুষের কাছে উজান (উঁচু) এলাকার মানুষ বিয়ে দিতে বা করাতে চাইত না, কিন্তু এ অবহেলিত হাওরাঞ্চলে আবদুল হামিদের জন্ম হওয়ায় আজ হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হলো। তাই তিনি বালিখলা সড়কটি আবদুল হামিদ সড়ক নামকরণের প্রস্তাব রাখেন।

জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম জানান, গাড়ি পারাপারের ফেরি চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় করিমগঞ্জের সুতারপাড়া ইউনিয়নের বালিখলা ঘাট থেকে গোবদিঘি হয়ে শান্তিপুর ঘাট পার হয়ে সরাসরি মিঠামইন সদরে গাড়ি চলাচল করবে। অন্যদিকে করিমগঞ্জের চামড়াঘাট থেকে বড়ইবাড়ি এলাকা হয়ে বলদা ঘাট পার হলেই ইটনা সদরে গাড়ি যাবে। তবে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম যোগাযোগের রাস্তার কিছু অংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে গাড়ি দিয়ে মিঠামইন থেকে সরাসরি অষ্টগ্রাম যাওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা মিলে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।