দুই তরুণের স্বেচ্ছায় পাঠদান

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন মো. মহসীন মিয়া। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন মো. মহসীন মিয়া। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব আট কিলোমিটার। বিদ্যালয়টিতে পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র দুজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের ১২৬ জন শিক্ষার্থীকে দুজন শিক্ষকের পক্ষে পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকসংকটের কথা শুনে দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় পাঠদান করছেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে বসে প্রথম শ্রেণির ২৩ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ২৮ শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে পড়াচ্ছেন মো. মহসীন মিয়া ও হুমায়ুন কবীর।

এই বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পাস করেন বর্তমানে রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হুমায়ুন কবীর। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির ২৮ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বিষয় পড়াচ্ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেছি। এ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বর্ণমালা শিখেছি। বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটের বিষয়টি জানতে পেরে বন্ধু মহসীন মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে স্বেচ্ছায় পাঠদানের সিদ্ধান্ত নিই। ২ জানুয়ারি থেকে আমরা বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করি।’

মো. মহসীন মিয়া বলেন, ‘আমি এই এলাকার সন্তান। বর্তমানে দীঘিনালা সরকারি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। যে বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেছি, সে বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই জেনে মনে কষ্ট লাগে। তাই স্বেচ্ছায় পাঠদানে উদ্যোগী হই। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত আমরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করি। এতে আমাদের দুজনেরও ভালো সময় কাটছে। আর খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারা দিন সময় কাটানোর আনন্দের অনুভূতিটাও অন্য রকম।’

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন হুমায়ুন কবীর। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন হুমায়ুন কবীর। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ১২৬ জন শিক্ষার্থী আছে। নতুন শিক্ষার্থীও ভর্তি হবে। বিদ্যালয়ে পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ থাকলেও আমরা কর্মরত আছি মাত্র দুজন। প্রশাসনিক কাজ ও কার্যালয়ের সভায় গেলে একজন শিক্ষকের পক্ষে পাঠ কার্যক্রম চালানো খুবই কষ্টকর। শিক্ষকসংকটের বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী এ বছরের শুরু থেকে স্বেচ্ছায় পাঠদান করছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে দুই তরুণ স্বেচ্ছায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন বলে শুনেছি। তাঁদের এমন কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়।’