৪২ সাবেক সচিবের হঠাৎ বৈঠক

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ফাইল ছবি
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ফাইল ছবি

দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে কাজ করতে চান সাবেক সচিবরা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদসহ ৪২ জন সাবেক সচিব এক বৈঠকে এই মত প্রকাশ করেছেন। চিঠি দিয়ে বৈঠকটি আহ্বান করেছেন দুদকের চেয়ারম্যান।

এই বৈঠকে একটি ফোরাম বা সংগঠন করার বিষয়ে একমত হয়েছেন সরকারের এই অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তার ফলাফলকে ত্বরান্বিত করতে তাঁদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে চান তাঁরা। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।

গত সোমবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির এক সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সাবেক সচিবদের চিঠি দেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া এ চিঠিতে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘জীবনের এক বড় সময় আপনি দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন। এ সেবা দেওয়ার সময় অর্জন করেছেন বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা, গ্রহণ করেছেন দেশে-বিদেশে নানা প্রশিক্ষণ, প্রত্যক্ষ করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাঁকবদল। এ ছাড়া আপনার রয়েছে চমৎকার শিক্ষাগত যোগ্যতার পটভূমি। এসবের মিথস্ক্রিয়ায় আপনি ধীরে ধীরে হয়েছেন ঋদ্ধ, পরিণত ও প্রাজ্ঞ। আপনার অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দেশের নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তার ফলাফলকে ত্বরান্বিত করতেও পারে। দেশ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে সবার ইতিবাচক সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে।’

এই সম্মিলিত প্রয়াসের উপায় ও ধরন কী হওয়া উচিত বা সাবেক সচিবদের সমন্বয়ে কোনো একটি প্ল্যাটফর্ম করা যায় কি না, তা আলোচনার জন্য তিনি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। বৈঠকে ৭৩,৭৭, ৭৯,৮১, ৮২ ও ৮২ (বিশেষ), ৮৪ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সচিব নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে সদস্যসচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানোর জন্য এ সংগঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হবে একটি গবেষণা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

>

সরকারের ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে কাজ করতে চান অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বৈঠকটি গোপন ছিল না জানতে চাইলে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব বলেন, ‘না, আমরা এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তথ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’

প্রসঙ্গত, তথ্য অধিদপ্তর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বিভাগ। এই অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কোনো বেসরকারি ব্যক্তি বা সংগঠনের খবর পিআইডি প্রচার করতে পারে না। পিআইডির কাজ সরকারের খবর প্রচার করা।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজিবিষয়ক (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে ওই সংগঠনে গঠনতন্ত্র তৈরির জন্য আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্রের কাজে লাগাব। তাই সব সাবেক সচিবের অংশগ্রহণেই হবে এ সংগঠন। প্রথমে একটি খসড়া তৈরি করে সবার ই-মেইলে দেওয়া হবে। তারপর সবার মতামত নিয়ে এর গঠনতন্ত্র তৈরি করা হবে।’

প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের ফোরাম গঠনের উদ্দেশ্য হতে পারে সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করা।

এই সভা ও দুদক চেয়ারম্যানের চিঠি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রথমত, দুদক চেয়ারম্যানের এ ধরনের চিঠি দেওয়া অনৈতিক। দ্বিতীয়ত, তাঁরা সব সাবেক সচিবকে আমন্ত্রণ জানাননি। ফলে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যে এই সভা করা হয়েছে, তা পরিষ্কার।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিব। আর এটা ছিল পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাবেক কয়েকজন সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ধরনের বৈঠক, সাদা কাগজে দুদক চেয়ারম্যানের আমন্ত্রণ এবং একই আদর্শে বিশ্বাসী সব সচিবকে এক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাঁরা বলেছেন, যাঁরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন, তাঁরাই উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত সাবেক সচিব খন্দকার শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা সচিব ছিলাম, তাঁরা একত্র হয়েছিলাম। সেখানে একটি ফোরাম গঠনের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব সোহরাব হোসাইন, মিজানুর রহমান, এ এস এম রশিদুল হাই, আতাউর রহমান, সিরাজুল হক, ইব্রাহীম হোসেন খান, সি কিউ কে মুশতাক, মোহাম্মদ মইনুদ্দিন আবদুল্লাহ, এম এ কাদের সরকার, মিকাইল শিপার, সেলিনা আফরোজ, শহিদুল হক, কাজী আখতার হোসেন, মাহবুব আহমেদ, আবদুল হান্নান প্রমুখ।