৯০ ফুট উচুঁ কালীপ্রতিমা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের ধাম আশ্রমে ৯০ ফুট উঁচু কালী দেবীর প্রতিমা।  প্রথম আলো
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের ধাম আশ্রমে ৯০ ফুট উঁচু কালী দেবীর প্রতিমা। প্রথম আলো

আশ্রমের আঙিনায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯০ ফুট উচ্চতার বিশাল কালীমূর্তি। কালীদেবীর প্রতিমা দিয়ে উদ্‌যাপন হচ্ছে বরদা মায়ের পূজা। হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে ঠাকুরবাড়ির ধাম আশ্রমে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। এ চিত্র পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের উত্তর মঠবাড়িয়া গ্রামের ধাম আশ্রমের।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বরদা মায়ের (কালী) পূজা। বরদাপূজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বিশাল আকৃতির কালীদেবির প্রতিমার পূজা করা হয়।

আশ্রমের পুরোহিত নির্মল চাঁদ ঠাকুর জানান, বরদা মা হলো কালীদেবীর বহু রূপের একটি রূপ। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা বর বা আশীর্বাদ লাভের আশায় বরদা মায়ের পূজা উদ্‌যাপন করেন। ধাম আশ্রমে তিন যুগ ধরে সরস্বতীপূজার আগের দিন থেকে তিন দিনব্যাপী বরদা মায়ের পূজা হচ্ছে। কালীদেবীর পূজা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া ও চব্বিশ পরগনায় প্রচলিত রয়েছে। তবে এত বড় উঁচু প্রতিমার পূজা অন্য কোথাও হয় না। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মাটির তৈরি কালীপ্রতিমা বলে দাবি করেন নির্মল চাঁদ ঠাকুর।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের নিত্যানন্দ হালদার তাঁর সহকারী দুলাল গাইনকে নিয়ে দেড় দশক ধরে ধাম আশ্রমের কালীদেবীর প্রতিমা তৈরি করছেন। তাঁরা জানান, দক্ষিণের জেলাগুলোয় সারা বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু প্রতিমার পূজা হয় মঠবাড়িয়ার ধাম আশ্রমে। তবে অতীতে তাঁদের এ ধরনের অতি উচ্চতার প্রতিমা গড়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। ২০০৭ সালে প্রথম ২১ ফুট উঁচু প্রতিমা তৈরি শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন সময় গড়েছেন নানা উচ্চতার প্রতিমা। ২০১৭ সালে ৮৪ ফুট ও ২০১৮ সালে গড়া হয় ৮৭ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। এ বছর নির্মাণ করা হয়েছে ৯০ ফুট উঁচু প্রতিমা।

প্রতিমাশিল্পী নিত্যানন্দ হালদার বলেন, দুজন গুণরাজ (মূর্তির কারিগর) আর ২৫ থেকে ৩০ শ্রমিক দুই মাস ধরে এই প্রতিমা তৈরি করেছেন। মাটি, বাঁশ, নলের চাটাই, খড়, পাটের সুতা, ধানের তুষ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিমা। এরপর রোদে শুকিয়ে পাটের তৈরি শাড়ি পরানোর পর রং করা হয়। ৯০ ফুট উঁচু কালী আর ৯৫ ফুট দীর্ঘ মহাদেব প্রতিমা (কালীর নিচে) তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর কীর্তন, কবিগান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হরি যাত্রাসহ নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সবশেষে শুক্রবার সকালে প্রসাদ বিতরণ ও দীক্ষা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও ভারত থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। পূজাকে ঘিরে আশ্রম প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। বিশাল আকৃতির প্রতিমা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার হিন্দুধর্মাবলম্বী, ভক্তরাসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা এ উৎসবস্থলে সমবেত হচ্ছেন।