খুঁটিজালে মাছ শিকার, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় চর এলাকায় অবৈধভাবে বাঁশের খুঁটিজাল বসিয়ে প্রকাশ্যে মাছ শিকার চলছে। এর ফলে মাছের সঙ্গে সঙ্গে মারা পড়ছে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক জীবের পোনা। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও মৎস্য শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহেশখালীর উপকূলের গোরকঘাটা, আদিনাথ মন্দিরসংলগ্ন এলাকা, মুদিরছড়া, জালিয়াপাড়া, শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়া, জেমঘাট, বদরখালীসংলগ্ন এলাকা, ধলঘাটা, সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গা, তাজিয়াকাটা, বড়দিয়া, ঝাপুয়া, হামিদারদিয়া চর এলাকাসহ অন্তত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধ খুঁটিজাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি নদী ও সাগরের মোহনা এলাকায় ২৫০টি বেড়া জাল ও ১০০টি বিহিঙ্গি জাল বসানো হয়েছে। আর এসব অবৈধ জালের কারণেও বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে।

মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, উপকুলীয় এলাকায় খুঁটিজালে মাছ ধরার কারণে কচ্ছপসহ বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পোনা ও লারভা মারা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সাগরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখা দেবে মাছের সংকটও।

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসংলগ্ন জেটি এলাকায় খুঁটিজাল ও কারেন্ট জাল বসিয়ে মাছ শিকার চলছে। সাগরে জোয়ার এলে বাঁশের খুঁটির ওপর বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল টাঙিয়ে দেন জেলেরা। পরে ভাটার সময় পানি নিচে নেমে গেলে জালের ভেতরে থাকা মাছ ধরে নিয়ে যান তাঁরা। এতে বড় ও ছোট মাছ ধরতে গিয়ে নানা ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার মাছের পোনা মরে যাচ্ছে। তবে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব নিষিদ্ধ জাল উচ্ছেদ করতে মাঠে নেমেছে তারা।

স্থানীয় কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটার মৎস্য শিকারি আলম বাঁশি ও আমির হোসেন বলেন, উপকূলের চর এলাকায় বাঁশের খুঁটিতে জাল বসিয়ে মাছ শিকার করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এলাকায় বিকল্প কিছু করার সামর্থ্য নেই মানুষজনের। ফলে নিরুপায় হয়ে নিষিদ্ধ জাল বসিয়ে মাছ শিকার করেন তিনিও। মাছ শিকার করতে গিয়ে বিরল প্রজাতির অনেক প্রাণীর পোনাও মারা যাচ্ছে বলে তাঁরা স্বীকার করেন।

খুঁটিজালে অবৈধভাবে মাছ শিকারের কথা স্বীকার করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিমেল চন্দ্র রায়। তিনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ এসব জালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে গোরকঘাটা ও আদিনাথ জেটি এলাকা থেকে তিনটি খুঁটিজাল জব্দ করার পর পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় দুটি বিহিঙ্গি জালও। সেগুলোও খুলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী অভিযান চালিয়ে উপকূলীয় চর এলাকা থেকে ১২টি খুঁটিজাল জব্দ করা হয়। ওই সময়ে অন্তত আট হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ২৫টি বিহিঙ্গি জাল জব্দ করার পর তা পুড়িয়ে ফেলা হয়।

জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলের চর এলাকায় খুঁটিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও মহেশখালী চ্যানেলে বাঁশের খুঁটিতে জাল বসিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে। নানা সময় অভিযান চালিয়ে এসব জাল ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি কোস্টগার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভবিষ্যতেও অভিযান চলবে।