৩০ ডিসেম্বরের লক্ষণ দেখছে বিএনপি

দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তের পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষণ দেখছে বিএনপি। বহিরাগত অজুহাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, বাসাবাড়িতে তল্লা​শির পাশাপাশি রাজধানীর মহল্লায় মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের মহড়াকে ভোটকেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, বাসাবাড়িতে তল্লা​শির ঘটনা ঘটেছিল। ওই নির্বাচনের ভোট দিনে নয়, ‘রাতেই নেওয়া হয়েছিল’ বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।

বিএনপির একা​ধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, তাঁরা খবর পাচ্ছেন, দুই সিটির সব ওয়ার্ডের মহল্লায় মহল্লায় গত বুধবার বিকেল থেকে মিছিলের নামে মহড়া দেওয়া হচ্ছে। এসব মিছিলে উত্তেজনাকর স্লোগানের সঙ্গে এমন দেহভঙ্গি প্রদর্শন করা হচ্ছে, যাতে নির্বাচনে প্রতিপক্ষ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা উত্তর সিটির দক্ষিণখানের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মিছিলে নেতা-কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা গেছে।

গতকাল বিকেলে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আওয়ামী লীগের একদল কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে এই হামলা চালান। হামলায় রাস্তায় পড়ে যান তিনি, হাতে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। হামলায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আজিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন আহত হন। এর আগে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মহল্লায় মহল্লায় সন্ত্রাসী দিয়ে মহড়া, হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ এনেছেন। আতঙ্ক তৈরি করে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পরিবেশকে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেছে।

বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের প্রবেশমুখে নৌকা প্রতীকের ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়ে পুরো জায়গা দখলে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। যাতে প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা কেন্দ্রের মুখে কোনো ব্যানার বা পোস্টার লাগাতে না পারেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অভিযোগ, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ ঢাকা সিটি নির্বাচনে জয় পেতে চায়। তিনি গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সঙ্গে কিছু সংস্থার লোক কাজ করছে। যারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত, তাদের পক্ষ থেকে অনেক কিছু করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অবশ্য বিএনপির নেতারা ভোটের আগমুহূর্তে মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি নেতিবাচক প্রচারে যেতে চাইছেন না। এতে ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে জন্য প্রার্থী এবং দলের নেতারা প্রচারণায় হামলা, বাধার কথা বললেও পরক্ষণেই ভোটারদের সাহস জোগাতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলছেন।

সিটি নির্বাচন পরিচালনার কাজে যুক্ত বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মূল মনোযোগ কেন্দ্রে দলীয় এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো। এ লক্ষ্যে একজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি এবং স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে পৃথক কেন্দ্র কমিটি করা হয়েছে। ভোটারদের উৎ​সাহিত করতে ভোট শুরুর আগে থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে গতকাল নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভোটের দিন কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

আর উত্তর সিটিতে দলের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারটি নিয়ে ‘কিন্তু’ রয়ে গেছে। ইভিএম মেশিন কীভাবে কাজ করে, সেটা ভোটের দিন বোঝা যাবে।