পাড়া-মহল্লায় সতর্ক দৃষ্টি রাখবে আ. লীগ

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘মুজিব বর্ষের’ মিছিল-সভা থেকেই কার্যত ভোটের মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মহড়া শুরু করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবারও দলটির নেতা-কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং পাড়া-মহল্লায় সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।

আগামীকাল শনিবার সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্র ও এর আশপাশে অবস্থান নেবেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দিনভর এ অবস্থান ধরে রাখা হবে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলটির এমন অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে।

তবে বিদেশি কূটনীতিকদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। তাঁরা মনে করছেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে বিএনপি খুব বেশি চিন্তিত নয়। ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে। এ জন্য শুরু থেকেই দলের নেতারা ভোটের প্রতিটি পদক্ষেপ বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত রাখার চেষ্টা করেছেন। কূটনীতিকেরাও সরব ভূমিকা পালন করেছেন। এ অবস্থায় ভোটের দিন আওয়ামী লীগ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখার যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে কূটনীতিকদের তৎপরতায় বাদ সাধতে পারে। এ জন্যই কূটনীতিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে দলটি।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে—এটা বোঝাতেই বিএনপির প্রচারে খুব একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। তবে প্রচারের শেষ দিন থেকে মাঠ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে আগেই পরিকল্পনা করে রাখা ছিল। এ জন্যই ঢাকায় মিছিল-সভা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সাধারণত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়ার হার তুলনামূলক বেশি হয়। তবে এবার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। বরং দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করাই মুখ্য। ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচন হয়। এতে মোট ভোট পড়ে ২৩ শতাংশ। ওই নির্বাচনে দিনভর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিটি কেন্দ্র দখলে রেখে ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।

সিটি নির্বাচন তদারকিতে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মেয়র পদের ভোট নিয়েই তাঁদের সব চিন্তা–পরিকল্পনা। দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী বাদ দিয়ে কেউ যাতে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নিয়ে বেশি ব্যস্ত না থাকেন, সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কাজে কেন্দ্রের বাইরে, ভেতরের লাইনে এবং বুথে কার কী ভূমিকা থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা সংঘাতে লিপ্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের সংঘাত ঠেকাতে বেশি তৎপর থাকবে। আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা থাকবেন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রতিপক্ষের ভোট এমনিতেই কমে যাবে। গত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অনেক এজেন্ট কেন্দ্রেই আসেননি। আবার অনেকে কেন্দ্রে এলেও পরিস্থিতি বুঝে চলে যান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে প্রচার চালিয়েছেন। ভোটাররাও সাড়া দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা জানেন সরকারি দলের প্রার্থী মেয়র হলে নগরবাসী উপকার পাবে। দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোটে জয়ী হবেন বলে মনে করেন তিনি।