ইভিএম বোঝানোর নামে ভোটকক্ষে আ.লীগ কর্মী

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বুঝতে পারছেন না অনেক ভোটার। বিশেষত, বৃদ্ধ নারী, পুরুষ ও দরিদ্র পরিবারের কম শিক্ষিত মানুষ। সেই সুযোগে তাঁদের সঙ্গে ভোটের গোপন কক্ষে ঢুকে পড়ছেন সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী বা সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী। ভোটার কিসে ভোট দিচ্ছেন, সেটাও তাঁরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন।

আজ শনিবার উত্তর সিটির নির্বাচনে উত্তরা গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুইটি কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। একটি কেন্দ্রের চারটি বুথে নারী এবং আরেকটি কেন্দ্রের আটটি বুথে পুরুষ ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। এই কেন্দ্রে নারী ভোটার ২ হাজার ৫৬৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৩২৮ জন।

কেন্দ্রের নারী ভোটারদের একটি বুথে দেখা যায়, খাদিজা নাজনীন নামের এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফসার উদ্দিন খানের কর্মী খুর্শিদা জাহান নামের এক ভোটারকে বুথের পর্দা ঘেরা ভোট দেওয়ার স্থান পর্যন্ত নিয়ে যান। এই কর্মী ভোটার ভোট দেওয়ার সময়ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ভোট শেষে খুর্শিদা জাহানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘ওই নারী (খাদিজা নাজনীন) আমার পেছন পেছন হেঁটে আমার ভোটকক্ষ পর্যন্ত চলে আসেন। তিনি আমাকে বারবার বলছিলেন “নৌকায় ভোট দেবেন”। ভোট দেওয়ার সময়ে নৌকা প্রতীকের বোতামে চাপ দিতে বলেন। আমি তাঁকে বারবার বলছিলাম আপনি চলে যান। কিন্তু তিনি পুরোপুরি গোপন কক্ষ থেকে বের হননি, দাঁড়িয়েছিলেন।’

এ ব্যাপারে খাদিজা নাজনীন বলেন, ‘কেউ বুঝতে না পারলে, তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে আছি।’ তবে তিনি জানান, তিনি ভোটার বা পোলিং এজেন্ট নন। ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আফসার উদ্দিনের কর্মী।

উত্তরা গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভোটকক্ষ। ছবি: প্রথম আলো
উত্তরা গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভোটকক্ষ। ছবি: প্রথম আলো

দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে আরেকজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ভোট দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় একজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বারবার চলে যেতে বললেও যাননি এবং তিনি কোথায় ভোট দিয়েছেন, তা দেখেছেন।

দ্বিতীয় তলার পুরুষ ভোটার কেন্দ্রেও এমন চিত্র দেখা যায়। এখানে ভোটারদের বোঝানোর জন্য ইভিএমের মতো একটি সংযোগবিহীন যন্ত্র ভোটারদের দেখাতে দেখা যায়। ওই যন্ত্রে মেয়র প্রার্থী কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক দৃশ্যমান ছিল।

এখানকার সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যন্ত্রটি ভোটারদের বোঝানোর জন্য রেখেছেন, এখান থেকে ভোট দেওয়া যায় না।

ডেমো যন্ত্র দিয়ে একজন ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত এক ব্যক্তি। ছবি: প্রথম আলো
ডেমো যন্ত্র দিয়ে একজন ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত এক ব্যক্তি। ছবি: প্রথম আলো

এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘যাঁরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদের বোঝানোর জন্য এই “ডেমো যন্ত্রটি” রেখেছি।’ তবে প্রতীকসহ ডেমো যন্ত্রটির ছবি তুলতে দেননি তিনি। সেটি আরেকটি বাক্সে ঢুকিয়ে ফেলেন।

ভোটকেন্দ্রে ভোটার, পোলিং এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী এবং অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ভেতরে থাকার নিয়ম নেই। এরপরও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে এবং বুথের ভেতরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরের কর্মীদের দেখা যায়।

এ ব্যাপারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘তাঁদের আমরা নিষেধ করছি। অনেকে গায়ের জোরে আসছেন। কেন্দ্রে বাড়তি লোক থাকার কথা না।’

ওই কেন্দ্রে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত নারী ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। একটি বুথে ৩৭০ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়।