সরকার ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিল: ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বলেছে, সরকারদলীয় লোকজনের আতঙ্ক ছড়ানো মহড়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর করাসহ নানা অনিয়মে নির্বাচন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নৈশ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী লীগ আরেকটি ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিল।

ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আজ শনিবার বেলা পৌনে তিনটায় গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে এসব অভিযোগ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ শনিবার বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নানা শঙ্কা ও আশঙ্কার মধ্যেও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং জনগণের ভোটে তাদের নগরপিতা নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা হাতপাখা প্রতীকে ঢাকা উত্তরে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বাংলাদেশে নির্বাচন উৎসব হলেও এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আসতে উৎসাহিত করার ঐতিহ্য থাকলেও আজ তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখার নির্মম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলো।’

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীকে প্রবেশ করতে না দেওয়া, সরকারদলীয় লোকজনের আতঙ্ক ছড়ানো মহড়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর করাসহ নানা অনিয়মে নির্বাচন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।

অনিয়মের অভিযোগ
ইসলামী আন্দোলনের অভিযোগ, হাতিরঝিল থানার মগবাজার নজরুল শিক্ষালয় কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে বারী মাসউদকে সরকারদলীয় লোকজন ঢুকতেই দেয়নি। ওই কেন্দ্রে হাতপাখার এজেন্টদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া উত্তরা পূর্ব থানায় মালেকাবানু স্কুল কেন্দ্র থেকে সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন হাতপাখার পোলিং এজেন্ট সিয়ামকে জোর করে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসলামী আন্দোলন। বলা হচ্ছে, এ সময় দায়িত্বরত পুলিশকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ইসলামী আন্দোলন বলছে, গুলশান থানায় শাহজাদপুর মডেল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে হাতপাখার পোলিং এজেন্ট জিয়া ও সোহেলকে সরকারদলীয় লোকজন ঢুকতে দেয়নি। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। একই থানার নজর মাহমুদ সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে হাতপাখার পোলিং এজেন্ট ইকরাম ও রবিউলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া তেজগাঁও থানায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ১, ২ ও ৩ নম্বর বুথ থেকে হাতপাখার পোলিং এজেন্ট ফিরোজ, বিল্লাল ও ওমর ফারুককে নৌকার লোকজন বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলটি বলছে, এ বিষয়ে পুলিশকে জানানোর পর তারা বলেছে, ‘আমাদের কিছু করার নেই।’

ইসলামী আন্দোলনের অভিযোগ, গুলশান ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কালাচাঁদপুর স্কুল কেন্দ্রে (কেন্দ্র নম্বর-৬২০) ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজধানী স্কুল কেন্দ্রে কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভাষানটেক থানার হোমিও কলেজ সেন্টারে হাতপাখার কোনো এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি। দারুসসালাম থানায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডে লালকুঠি আরসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কবি নজরুল স্কুল, নতুন কুঁড়ি স্কুল কেন্দ্র থেকেও এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বিবৃতিতে বলছে, মোহাম্মদপুর থানার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৮২, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯৩, ৯৮, ১০৮ ও ১০৯ নম্বর কেন্দ্রে হাতপাখার এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাফরাবাদ আদর্শ সরকারি কেন্দ্র থেকে সরকারদলীয় পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে রূপনগর থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চম্পা পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, শাহ আলী থানার মসজিদে আকবর কমপ্লেক্স কেন্দ্রে, তুরাগ থানার ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে ঠকশোলয় স্কুল কেন্দ্র, দক্ষিণ খান থানার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে হাতপাখার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে দলটি আরও বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নৈশ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী লীগ আরেকটি ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিল। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।