এবারও ভোটের মাঠে ছিল না বিএনপি

>বিএনপি পাল্টা অবস্থান নেওয়া দূরে থাক ভোটারদের আশ্বস্ত করার মতো কিছু করতেও সক্ষম হয়নি।

ভোটের মাঠে ছিল না বিএনপি। নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিপুল সমাগম থাকলেও নির্বাচনের দিন তেমন কাউকে দেখা যায়নি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের চাপ ও কৌশলের কাছে হেরে টিকতে পারেননি দলটির নেতা-কর্মীরা। গতকাল শনিবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সব এজেন্টকে কেন্দ্রে পাঠাতে পারেনি। কোথাও কোথাও এজেন্টরা কেন্দ্র পর্যন্ত গেলেও টিকে থাকার সামর্থ্য ছিল না তাঁদের।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষ ছিল। একেকটি কেন্দ্রে গড়ে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫টি করে ভোটকক্ষ ছিল। গতকাল ঢাকার দুই সিটিতে এমন ভোটকেন্দ্র পাওয়া যায়নি, যেখানকার সব কটি কক্ষে ধানের শীষ প্রতীক বা বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।

বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সম্ভাব্য এজেন্টদের টার্গেট করে হুমকি-ধমকি দেন। এরপরও অনেকে হুমকি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আবার অনেক এজেন্ট ভোটকক্ষে গিয়ে বসলেও তাঁদের বের করে দেওয়া হয়েছে। দলটির দাবি, এজেন্ট বের করে দেওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে নীরবে। ফলে মানুষ ভোট দিতে গিয়ে জেনেছেন, কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্ট নেই।

সরকারি দলের নেতারা আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার। বিএনপি এর পাল্টা অবস্থান তো নিতেই পারেনি, এমনকি ভোটারদের আশ্বস্ত করার মতো কিছু করতেও সক্ষম হয়নি। আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্রের একটিতেও বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। প্রায় সব কেন্দ্রই ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে।

জানা গেছে, সকালের দিকে বিএনপির এজেন্টদের অনেকে ভয়ে কেন্দ্রে যাননি। ভোট শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পরও অনেক এজেন্টকে ​খুঁজে এনে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির মুখে বেশিক্ষণ কেন্দ্রে থাকতে পারেননি। অবশ্য এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনা সব কেন্দ্রে ঘটলেও বাদানুবাদ খুব একটা হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাধা পেয়ে নীরবেই কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টরা।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, যাঁরা এই বাধা অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, তাঁদের সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, মারধর করে বের করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

গতকাল সকাল নয়টার দিকে সাংবাদিকদের সামনেই ঢাকা উত্তরের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা আনোয়ারা মডেল ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবরের (টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক) এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। ফারুকুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি এই কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে গিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারের এজেন্ট কে কে আছেন, খুঁজে বের করেন। এরপর তাঁদের কেন্দ্র থেকে চলে যেতে বলেন। ফারুকুজ্জামান ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এ কে এম মাসুদুজ্জামানের (লাটিম প্রতীক) চাচা। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও নৌকা ও লাটিম প্রতীকের ব্যাজ পরা চার-পাঁচজনকে দেখা যায়। একটি বুথ থেকে যখন এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছিল, তখন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আসাদুর রহমান সামনে ছিলেন। তিনি চুপ ছিলেন।

ওই কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ ও বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবরের এজেন্ট আমেনা আক্তার, সামিয়া সুলতানা, নাসিমা আক্তার, মরিয়ম, শামীম আহমেদ, কোহিনূর, আদিবা সুলতানা, শাকিলা আক্তারকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় কেউ উচ্চবাচ্য করেননি। এর মধ্যে দুজনের এজেন্ট কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়।

পরে শাকিলা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারুকুজ্জামান আমাকে বলেছেন, একদম বের হয়ে গেটের বাইরে যাবি, আর যেন না দেখি।’

জানা গেছে, বি​এনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল আটটার আগেই কোথাও কোথাও তাঁদের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। প্রার্থী এসে আবার এজেন্টদের কেন্দ্রে বসিয়ে দেন। কিন্তু প্রার্থী চলে যাওয়ার পর অনেককে মারধর ও শারীরিকভাবে অপদস্থ হতে হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে উত্তর সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাফরুলের বিভিন্ন কেন্দ্রে। সেখানে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ৩১ জন এজেন্টকে মারধর ও হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে ৩৬টি কেন্দ্রে ২৪৭ জন এজেন্টকে ঢুকিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু আটটার আগেই তাঁদের বের করে দেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমানের কর্মীরা। ১০টার দিকে আমি আবার তাঁদের ঢুকিয়ে দিয়ে আসি। কিছুক্ষণ পর তাঁদের মেরে বের করে দেয়।’