রাজীবের মৃত্যু: দুই বাসচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মৃত্যু। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মৃত্যু। প্রথম আলো ফাইল ছবি

দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই বাসচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে শাহবাগ থানার পুলিশ। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই অভিযোগপত্র জমা দিলেও বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে আজ সোমবার। দণ্ডবিধির ৩০৪-খ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হলেন বিআরটিসির বাসচালক ওয়াহেদ সরদার ও স্বজন পরিবহনের বাসচালক খোরশেদ আলম। দুই বাসচালক এখন জামিনে আছেন। আদালত সূত্র বলছে, তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মৃত্যুর ঘটনার মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির দিন রয়েছে আজ।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিলেও তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। দণ্ডবিধির ৩০৪-খ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়ায় এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবেন। দুই বাসচালক ইচ্ছা করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তাঁরা চান, দুই বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি বাদীর পরিবার জানেন না, সে খবর তাঁর জানা নেই। তদন্তে যে ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, সেই ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর ১৬ এপ্রিল থেকে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। ওই দিন দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।

রাজীবের মৃত্যুর ঘটনার জন্য হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে। দুই বাস কর্তৃপক্ষ আপিল করলে উচ্চ আদালত মৃত্যুর কারণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেন। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। হাইকোর্টে জমা দেওয়া কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের বেপরোয়া চালনাই দায়ী। হালকা যানের চালককে দিয়ে ডাবল ডেকার চালানোর জন্য বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।