করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে চীনের ২০ নাগরিক কোয়ারেন্টাইনে

আগতদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছেন স্বজনেরা। গতকাল আশকোনায়। প্রথম আলো
আগতদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছেন স্বজনেরা। গতকাল আশকোনায়। প্রথম আলো

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলায় ২০ জন চীনা নাগরিককে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একটি ভবনে তাঁদের রাখা হয়েছে। বাইরের কারও সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ২৩ জানুয়ারির পর থেকে তাঁরা বাংলাদেশে এসেছেন।

এদিকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা চীনফেরত ৩০২ জন বাংলাদেশি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তাঁদের মধ্যে গতকাল দুজন মা ও তাঁদের শিশুসহ মোট পাঁচজনকে আলাদা জায়গায় কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।

সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীন থেকে আসা চীনা নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে সরকার। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চীনের নাগরিকদের জন্য অন অ্যারাইভাল (আগমনী ভিসা) আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল রোববার সকালে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ জানুয়ারি চীনের উহানে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গত শনিবার রাত পর্যন্ত চীনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩০৪ হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি। চীনের বাইরে মারা গেছেন একজন, ফিলিপাইনে। তিনি অবশ্য চীনেরই নাগরিক। এ পর্যন্ত ২৬টি দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি (বাংলাদেশে ৩১ জানুয়ারি) বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সংস্থাটি বলেছে, একাধিক দেশে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের নজির পাওয়া গেছে।

কোয়ারেন্টাইনে ২০ চীনা নাগরিক
দেশে বাস্তবায়নাধীন বেশ কয়েকটি প্রকল্পে চীনা নাগরিকেরা কাজ করছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চীন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসা ২০ জন চীনা শ্রমিককে পৃথক একটি ভবনে রাখা হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, কোয়ারেন্টাইন করে রাখা ২০ জনের ১৭ জন বাংলাদেশে এসেছেন ৩০ জানুয়ারি। ২ জন এসেছেন ২৩ জানুয়ারি। বাকিজন ২৬ জানুয়ারি এসেছেন। চীনের বিমানবন্দরে এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।

>

আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা চীনফেরত ৩০২ জন বাংলাদেশি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কর্মকর্তারা। এসব প্রকল্পে চীনা নাগরিকেরা কাজ করেন। এখন যাঁরা আসছেন, তাঁদের পৃথক করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আশকোনা হজ ক্যাম্প

শনিবার সরকার বিশেষ উড়োজাহাজে করে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে চীন থেকে ফেরত এনেছে। ওই দিনই তাঁদের সাতজনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এবং তিনজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৩০২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়।

গতকাল দুপুরে আশকোনা হজ ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজনেরা গরম পোশাক, স্যান্ডেল, খাবার নিয়ে এসেছেন। তাঁদের কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দ্রব্যসামগ্রী নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এর আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে একজন চীনা নাগরিক ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর চীনফেরত একজন প্রবাসী সফটওয়্যার প্রকৌশলী জ্বর নিয়ে দেশে ফেরেন এবং তাঁকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গতকাল বিকেলে আইইডিসিআর জানিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রত্যেকের লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো কেউ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হননি।

বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকে বলে আসছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পৃথক কক্ষ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।