প্রাণচাঞ্চল্যে উদ্দীপ্ত চিরচেনা মেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন শেষে স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে (সামনের সারিতে বাঁ থেকে) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গতকাল বাংলা একাডেমিতে।  ছবি: বাসস
অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন শেষে স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে (সামনের সারিতে বাঁ থেকে) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গতকাল বাংলা একাডেমিতে। ছবি: বাসস

এই দিনের জন্য প্রতীক্ষা সারা বছরের। যাঁরা বই ভালোবাসেন, আড্ডা ভালোবাসেন, তাঁরা ফেব্রুয়ারি মাসের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিবারের মতো ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন নয়, এবার মেলা শুরু হলো ২ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতের অপরাহ্ণে গতকাল রোববার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় বই আমার দেখা নয়াচীন–এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধন করে বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে চাই।’ 

বইমেলা এখন কেবল বই কেনাবেচার কেন্দ্র নয়, এটি বাঙালির প্রাণের মেলাও—এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বইমেলা উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাঙালিরা দেশে আসেন। বিদেশি নাগরিকেরাও বইয়ের প্রতি বাঙালির নজিরবিহীন ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ সফরে আসেন।’

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন।

মেলার উদ্বোধন ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী ১০ লেখকের হাতে ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন। এবারের পুরস্কৃত লেখকেরা হলেন কবিতায় মাকিদ হায়দার, উপন্যাসে ওয়াসি আহমেদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরোচিষ সরকার, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, নাটকে রতন সিদ্দিকী, কিশোর সাহিত্যে রহিম শাহ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান উপন্যাসে নাদিরা মজুমদার, ভ্রমণ সাহিত্যে ফারুক মঈনউদ্দীন এবং লোকসাহিত্যে সাইমন জাকারিয়া।

বইমেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) স্টলে গ্রাফিক নভেল মুজিব–এর সপ্তম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। তাঁর হাতে গ্রাফিক নভেল মুজিব–এর সপ্তম খণ্ড তুলে দেন সিআরআই ট্রাস্টি ও গ্রাফিক নভেল মুজিব–এর প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বইটি হাতে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটা তো সেই বই, তাই না?’

রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার শিল্পীদের গাওয়া জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে শিল্পীরা পরিবেশন করেন একুশের গান।

বঙ্গবন্ধুর লেখা আমার দেখা নয়াচীন বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি
বঙ্গবন্ধুর লেখা আমার দেখা নয়াচীন বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিয়মানুসারে শুধু আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাই অংশ নিয়েছেন। মেলা–অন্তঃপ্রাণ গ্রন্থানুরাগীরা টিএসসি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, দোয়েল চত্বরের আশপাশে অপেক্ষায় ছিলেন। বেলা ডোবার কিছুক্ষণ আগে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী যখন মেলা ত্যাগ করেন, তখন দরজা খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। খোলামাত্র মেলা প্রাঙ্গণে নিমেষে প্রাণচাঞ্চল্যে উদ্দীপ্ত সেই চিরচেনা পরিবেশ আবার ফিরে আসে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর অবধি ছড়িয়ে পড়ে তার স্পন্দন।

ছড়িয়ে–ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে এবারের মেলা। বিন্যাস সুন্দর—ঘুরে বেড়ানোর মতো। এবার একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৪টি প্রকাশনীকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথমবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের দেখা মিলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।

উল্লেখযোগ্য ভিড় হলেও সে তুলনায় বিক্রি তেমন হয়নি গতকাল। ঘুরেফিরে সময় কাটিয়ে দর্শনার্থীরা ঘরে ফিরেছেন বিভিন্ন প্রকাশনীর নতুন বইয়ের তালিকা নিয়ে।