থানায় সেই নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি, তবে পেটানো হয়েছে: পিবিআই

খুলনা রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি থানার মধ্যে ওই নারীকে শুধু লাঠি দিয়ে আঘাত করার প্রমাণ পেয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর জিআরপি থানায় এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয় ওই থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গণি পাঠান ও ডিউটি অফিসারসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে। ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

গতকাল রোববার ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক শেখ আবু বকর। আজ সোমবার দুপুরে খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. আনিছুর রহমান বলেন, মামলাটি খুবই নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই নারীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। এ ছাড়া অন্যান্য সাক্ষ্যতেও ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে থানার তৎকালীন ওসি উছমান গনি পাঠান ওই নারীকে লাঠি দিয়ে দুটি আঘাত করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগী নারীকে ডিএনএ টেস্টের জন্য বলা হলেও তিনি তাতে রাজি হননি। এ ছাড়া মামলার এজাহারে তিনি ওসি ও একজন এএসআইসহ অজ্ঞাত তিনজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করেছিলেন, যাদের তিনি দেখলে চিনতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু তাঁকে টিআই প্যারেড বা আসামি শনাক্ত করার জন্য জিআরপি থানায় যেতে বলা হলেও তিনি তাতে রাজি হননি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পিবিআই-এর পুলিশ সুপার বলেন, ওসি উছমানের সঙ্গে বাদীর কোনো আপসরফা হয়েছে কি না, তা তাঁদের জানা নেই। ওই নারীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি ও খুলনার দৌলতপুর থানায় মোবাইল চুরির দুটি মামলা রয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ওই নারী ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মারধর ও ধর্ষণের দুটি মামলা করেছিলেন। মারধরের মামলায় রেলওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ গত ১৬ জানুয়ারি ওসি উছমানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই মামলার চার্জশিটে অন্য চার পুলিশ সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১৭ ডিসেম্বর ওই নারী আদালতে একটি অ্যাফিডেভিট দাখিল করেন। তাতে তিনি বলেন, মানুষের কুপ্ররোচনায় তিনি মারধরের মামলাটি দায়ের করেছিলেন। কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে তিনি নারাজি দাখিল করবেন না। তবে ওই নারীর দৌলতপুর থানা এলাকার বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তবে তাঁর বড় বোন মোবাইল ফোনে বলেন, মামলা দায়েরসহ থানা, হাসপাতাল ও আদালতে তিনি তাঁর বোনের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। তাঁর বোন কোনো অ্যাফিডেভিট দাখিল করেছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। এ ছাড়া ওসি উছমান গণির সঙ্গে তাঁর বোনের কোনো আপসরফা হয়েছে কি না, তাও তিনি জানেন না।

আগে ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, গত ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে আটক করে। এরপর রাতে জিআরপি থানায় থাকার সময় ওই থানার ওসি উছমান গনি পাঠান তাঁকে মারধর ও ধর্ষণ করেন। পরে সেখানে ডিউটিরত আরও চার পুলিশ সদস্য তাঁকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। পরদিন ৩ আগস্ট তাঁকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ আগস্ট ওসি উছমান গণি পাঠান ও এএসআই নাজমুল হককে পাকশী রেলওয়ে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। ৯ আগস্ট খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালত-৩ এর নির্দেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ওই ওসি ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কারাগারে থেকেই ওই মামলাটিও করেন ভুক্তভোগী সেই নারী।