গণফোরামে গন্ডগোল

ড. কামাল, সুব্রত চৌধুরী ও রেজা কিবরিয়া
ড. কামাল, সুব্রত চৌধুরী ও রেজা কিবরিয়া

গণফোরামে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। আর এর প্রতিক্রিয়ায় ওই সব বহিষ্কৃতরা খোদ সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককেই সাময়িক বহিষ্কার করেছেন। দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘এই বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে কিছুই জানি না। একটা ঝামেলা শুরু হয়েছে। মহাবিপদে আছি আর কী।’

এই বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার নিয়ে দলটিতে দৃশ্যত দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষই বলছে, দলীয় সভাপতির সম্মতি নিয়েই সবকিছু হচ্ছে। যদিও দুপক্ষের কেউই এখন পর্যন্ত দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেননি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক, আইনজীবী ড. কামাল হোসেন গণফোরামের সভাপতি সেই প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯২ সাল থেকে।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল হয়। এরপর ৫ মে গণফোরামের পুনর্গঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদি পুনর্গঠিত কমিটিতে সভাপতি পদে বহাল থাকেন ড. কামাল হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান রেজা কিবরিয়া। তিনি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর স্থলাভিষিক্ত হন। রেজা কিবরিয়ার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) আসনের সাংসদ ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেন রেজা কিবরিয়া। তাঁকে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়। রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হন। তবে তিনি হেরে যান।

একাধিক সূত্র জানায়, রেজা কিবরিয়ার সাধারণ সম্পাদক হওয়া সহজভাবে নিতে পারেননি দলের একাধিক নেতা। এদের মধ্যে নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীও আছেন। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপের সময় সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার বিষয়ে তাঁর উষ্মা প্রকাশ পায়। বর্তমান সংকট নিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলছিলেন, ‘অনেক পদায়ন হচ্ছে, আবার বাইরের লোকদের নিয়ে এসে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সব হচ্ছে একক সিদ্ধান্তে। সাধারণ সম্পাদক নিজে এসব করছেন। স্যারের (ড. কামাল হোসেন) হয়তো সই নিচ্ছেন।’

রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গত ৩০ জানুয়ারি ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ’ করার দায়ে দলের প্রচার সম্পাদক খান সিদ্দিক, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামীম ও হেলাল উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এ তথ্য জানান রেজার সঙ্গে বহিষ্কৃত দলীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশতাক আহমেদ।

রেজা কিবরিয়ার এ সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করে দলের একাংশকে।

রেজা কিবরিয়া বিরোধীদের দাবি, গত ২৮ জানুয়ারি তারা ‘দলীয় কর্মকাণ্ডে না থাকার জন্য’ সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে এবং ‘দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের; ’ জন্য সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির ৫৮ জন সদস্য মিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামীম। তবে মুশতাক আহমেদ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দারের চেম্বারে বসে দলের গুটিকয়েক লোক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে জগলুল হায়দারকে ফোন করে তিনি তা ধরে দিয়ে দেন লতিফুর বারীকে। তিনি বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অফিসে এসেছেন তিন দিন। তাও মিটিংয়ের মাঝখানে এসে চলে গেছেন। দলের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। বারবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ডাকার অনুরোধ করা হলেও তিনি গত অক্টোবর থেকে সময় দিয়েও করেননি। সর্বশেষ আমাদের সম্পাদকদের বহিষ্কার করার কথা শুনেই এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ‘বহিষ্কৃত’ মুশতাক সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি দলের মধ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।

লতিফুল বারী বলেন, সৎ ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে পাকিস্তানি ধারার লোকজন, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত লোকজনকে দলের নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে ভেড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব করা হচ্ছে।

দলীয় সভাপতির সম্মতি ছাড়া কীভাবে বহিষ্কার করা হলো খোদ সাধারণ সম্পাদককে? প্রশ্নের জবাবে লতিফুল বারী বলেন, তাঁর সঙ্গে আজই দেখা করার চেষ্টা করা হবে। আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়েছে।

রেজা কিবরিয়া এখন স্ত্রী ও সন্তানের অসুস্থতার কারণে সিঙ্গাপুরে আছেন। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দিতে নারাজ মুশতাক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটাকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছি না। এর সঙ্গে কোনো কর্মী নাই। যারা করেছে তারা নামকাওয়াস্তে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা করেছে। দলের সভাপতিই এটা জানেন না।

মুশতাক আহমেদ গুরুত্ব না দিলেও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী অবশ্য বেশ বিচলিত। তিনি বলেন, ‘চাইছিলাম সবাই বসে একটু ঠিকঠাক করার জন্য। চেষ্টাও করলাম। লোকজন যারা আছে কমিটিতে তারও অসহিষ্ণু হয়ে গেছে।’

দলে এমন বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটলেও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু এসবের কিছুই জানেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সময় তো এমনটা হয়নি। এভাবে তো কাউকে হুট করে বহিষ্কার করা যায় না। এটা কেন হচ্ছে বলতে পারব না।’