আপাতত পুরোনো বই-ই সই

রাকিব সিরাজীর হাতে কালনিরবধি। আনিসুজ্জামানের লেখা। প্রথমা প্রকাশন থেকে এইমাত্র বইটি কিনে তিনি বের হয়েছেন। সঙ্গে একজন বন্ধু। ‘এ বছরের নয় বইটি, কিনলেন কেন?’

‘বিখ্যাত মানুষের জীবনের প্রতি আগ্রহ রয়েছে আমার।’ বললেন রাকিব।

অনেক সময়ই লোকমুখে শুনে কিংবা বইয়ে পড়ে কোনো কোনো বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। তখন নতুন কোনো বইয়ের প্রশ্নটি অনেকের কাছে গৌণ হয়ে যায়। মেলার চতুর্থ দিনে সে রকম বইপাগল কিছু মানুষের দেখা পাওয়া গেল।

অক্ষর প্রকাশনী থেকে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কাব্যসমগ্র দেখছিলেন নজরুল ইসলাম।

‘নজরুল, আপনি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বই দেখছেন কেন?’ নজরুল জানালেন, তাঁর এক তুতো বোন আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন। তাঁরই জন্য ভালো কবিতার বই খুঁজছেন তিনি। নজরুল অবশ্য কবিতার প্রেমে মজেননি। তিনি নিজেকে এখনো বেঁধে রেখেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে। 

তাম্রলিপিতে সোহান, ইসমাইল, শোয়াইব নামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে বই দেখছিলেন। আয়মান সাদিকের বই কিনবেন শোয়াইব। হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলির রহস্য ভেদ করার জন্য প্রস্তুত ইসমাইল আর কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি এরই মধ্যে ঢুকে গেছে সুহানের ব্যাগে। 

মূর্ধন্য’তে রবীন্দ্রনাথ ও বাউলবিষয়ক বই খুঁজতে এসেছেন রাশেদ। প্রত্যাশিত বইটি না পেলেও হাতে তাঁর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অন্য একটি বই। 

‘বইটি কবে ছাপা হয়েছে, সেটা আমার জন্য জরুরি নয়। আমি চাই বাউল ধর্মের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে সংযোগ, সেটা বইয়ের মাধ্যমে আবিষ্কার করতে।’

জানালেন রাশেদ। নবযুগ প্রকাশনী থেকে এরই মধ্যে তিনি সংগ্রহ করেছেন লালন দর্শনের ভূমিকা। 

সাইফুল্লাহ কিনেছেন মানুষের স্বরূপ। আবুল কাসেম ফজলুল হকের লেখা, কথাপ্রকাশ থেকে। 

তিনটি ছোট ছোট বাচ্চা ভাইবোন। মিশুয়ান, সুমাইয়া দীপ্তি আর টায়রা পরা ক্লাস টুর মেয়ে ফারিহা। ওদের প্রত্যেকের হাতে বইয়ের ব্যাগ। চতুর্থ দিনে শিশুরা বই কিনছে, তাতে একটু অবাকই লাগে। প্রশ্ন করে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে মায়ের সঙ্গে ওরা ঢাকায় এসেছে বই কিনতে, শুক্রবার ফিরে যাবে চট্টগ্রাম। তাই মনের সাধ মিটিয়ে বই কিনল ওরা। পরীক্ষায় ফল ভালো করার কলাকৌশল, শেয়ালের পাঠশালা, ডাইনোসরের গল্প, জেব্রার গায়ে ডোরা এল কেমন করে। রবীন্দ্রনাথের আমাদের ছোট নদী, যতীন্দ্র মোহন বাগচীর কাজলা দিদি। 

সাদিয়া কিনছিলেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। বোঝা যাচ্ছিল, তিনি কিছুদিনের মধ্যেই একজন নতুন মানুষকে আনবেন পৃথিবীতে। বইয়ের পোকা তিনি। এমবিএ করছেন এখন। অবসর সময়টা বই পড়ে কাটাবেন এবং অপেক্ষা করবেন সামনে নতুন একটা জীবনের জন্য। 

মেলায় এসেছে বেশ কিছু নতুন বই। এর মধ্যে প্রথমা প্রকাশন এনেছে বুলবুল সিদ্দিকীর তাবলিগ জামাত: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিসরে, শঙ্খ ঘোষের সন্ধ্যানদীর জলে বাংলাদেশ, নোবেল বিজয়ী জাপানি লেখক কাজুও ইশিগুরোর অ্যান আর্টিস্ট অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি বিনোদনের এক শিল্পী নামে এসেছে কাজী জাওয়াদের অনুবাদে। উল্লেখ্য, ৪ ফেব্রুয়ারি কাজী জাওয়াদ অনূদিত হাজি মুরাদ বইটিতে এই অনুবাদকের নামটি ভুল ছাপা হয়। চন্দ্রবিন্দু এনেছে হরিশংকর জলদাসের আহব ইদানীং। বাতিঘর এনেছে মহিউদ্দিন আহমদের ৩২ নম্বর পাশের বাড়ি।