জাহাজবাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান: অভিযোগ গঠনের আদেশ ২ মার্চ

হলি আর্টিজানের ঘটনার মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি রাকিবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
হলি আর্টিজানের ঘটনার মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি রাকিবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান

রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজবাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৯জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়েছে। আগামী ২ মার্চ অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবর রহমান আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।

এই মামলার আসামি ও হলি আর্টিজানের ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জঙ্গিসহ সাতজনকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আগামী ২ মার্চ অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

হলি আর্টিজান মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান,আবদুস সবুর খান, হাদিসুর রহমান সাগর ও শরিফুল ইসলামের কাছে আদালত জানতে চান, তাঁরা আইনজীবী নিয়োগ করবেন কিনা? জবাবে শরিফুল ইসলাম ও রাকিবুল হাসান আদালতকে জানান, তাঁরা আইনজীবী নিয়োগ করবেন না। অপর দিকে হাদিসুর রহমান বলেন, পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আবদুস সবুর খান আদালতকে বলেন, আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই? তখন আদালত তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করবেন কিনা? জবাবে সবুর আদালতকে জানান, তিনি সরকারি আইনজীবী দেবেন না। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘জাহাজবাড়ি’ বলে পরিচিত বাড়িতে জঙ্গিদের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ‘অপারেশন স্ট্রম-২৬’ নামের ওই অভিযানে ৯ জন নিহত হন। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান নামের একজনকে।

এই মামলা তদন্ত করে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট রাকিবুল হাসানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। গত বছরের ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলার আসামিরা হলেন আসলাম হোসেন র‌্যাশ, শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন, আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট, আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, সালাহ উদ্দিন কামরান, আবদুর রউফ প্রধান, আবদুস সবুর খান, হাদিসুর রহমান সাগর ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান। পলাতক আছেন আসামি আজাদুল। জামিনে আছেন কাশেম ও রউফ।

হলি আর্টিজান মামলার রায় ঘোষণার দিন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান ও রাজীব গান্ধী আদালতে আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরেন। গত ৩ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানির সময় আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান আদালতের কাছে দাবি করেন, রায় ঘোষণার দিন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাঁকে আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপিটি দিয়েছিলেন।

হোলি আর্টিজান হামলা মামলায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাকিবুল, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে অভিজাত রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী পাঁচ জঙ্গি হামলা চালান। তাঁরা বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করেন। নিহত লোকজনের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের, ৩ জন বাংলাদেশের ও একজন ভারতের নাগরিক। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড ও গুলিতে।