করোনাভাইরাসের প্রভাব আকাশপথে

>
  • লোকসান কমাতে ছোট উড়োজাহাজে ফ্লাইট পরিচালনা
  • চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইটের সংখ্যাও কমছে

করোনাভাইরাস দেশের বিমান চলাচলে প্রভাব ফেলেছে। প্রতিদিনই যাত্রীসংখ্যা কমছে। তাই খরচ কমাতে বৃহদাকার উড়োজাহাজের পরিবর্তে ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রী বহন করছিল বিমান সংস্থাগুলো। কিন্তু তাতেও লোকসানের বোঝা কমাতে পারছিল না। তাই ফ্লাইটের সংখ্যা কমানোর কাজ শুরু করেছে সংস্থাগুলো।

চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আজ শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন আছে ৩১ হাজার ১৬১ জন। চীন থেকে বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য চীনে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পগুলোতে চীনা প্রকৌশলীরা কাজ করছেন।

বর্তমানে দেশীয় বিমান সংস্থার মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস এবং বিদেশি বিমান সংস্থার মধ্যে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতি সপ্তাহে তাদের ৪২টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করত। এর মধ্যে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলছে ঢাকা-কুনমিং-ঢাকা রুটে। সপ্তাহে সাত দিনই তাদের ফ্লাইট চলত। একইভাবে সাত দিনই ফ্লাইট চলে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের। তবে এ দুটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলে ঢাকা-গুয়াংজু রুটে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইটসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। সপ্তাহে সাত দিনের বদলে এখন থেকে সপ্তাহে তিন দিন (শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) ফ্লাইট চালাবে তারা। চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রী কমে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন শিডিউলে ফ্লাইট চলবে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা দুইটার দিকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে চায়না ইস্টার্নের ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দেড় ঘণ্টার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাত্র পাঁচজন যাত্রী নিয়ে কুনমিংয়ে রওনা দেয় তাদের ফিরতি ফ্লাইটটি।

চায়না ইস্টার্নের পর চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসও ফ্লাইটসংখ্যা কমিয়ে আনতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে (সোমবার, বুধবার, শুক্রবার ও রোববার) চারটি ফ্লাইট চলবে তাদের। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই নিয়মে ফ্লাইট শিডিউল রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে সুপরিসর উড়োজাহাজে ফ্লাইট চালাতো চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। তাই ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে চলত এয়ারবাস এ৩৩০ উড়োজাহাজ। যার যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৮০ জন। কিন্তু যাত্রী কমে যাওয়ার কারণে গত জানুয়ারির শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের পথে উড়ে আসছে চায়না সাউদার্নের ১৭৫ আসনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ। তবে ছোট উড়োজাহাজ পাঠিয়েও আসনসংখ্যা পূর্ণ হচ্ছে না।

চায়না সাউদার্নের মতো ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে চলাচল করে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। সপ্তাহে সাত দিনই ঢাকা থেকে তাদের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ চীনের উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে এখনো পর্যন্ত তাদের যাত্রীসংখ্যা খুব একটা কমেনি। এ কথা জানান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চীনা নববর্ষ ও করোনাভাইরাসের প্রভাব কিছুটা পড়েছে। নববর্ষের কারণে বড় একটি সংখ্যা চীনে গেছেন। বর্তমানে চীন থেকে যাত্রী বেশি আসছে। তবে সেখানে যাত্রী কম যাচ্ছে।

চীন থেকে সরাসরি আসা ফ্লাইটগুলোকে বোর্ডিং ব্রিজ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলোর যাত্রীরা বিকল্প পথ দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁদের আলাদাভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজ চলবে।