৩০৬ কেন্দ্রে তাবিথের ভোট এক শরও কম

তাবিথ আউয়াল। ফাইল ছবি
তাবিথ আউয়াল। ফাইল ছবি

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরুষ কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন মাত্র ২ ভোট। এখানে মোট ভোটার ২ হাজার ২৫৯। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২০১ জন। এই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ১৯৭।

উত্তর সিটি নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে ১০ ভোটেরও কম পেয়েছেন ১১টি কেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলো সব তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত।

তাবিথ সবচেয়ে কম ভোট পান তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরুষ (৪) কেন্দ্রে। এখানে ধানের শীষে পড়েছে ২ ভোট। যদিও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল আলম পেয়েছিলেন ২৫৬ ভোট। যদিও ওই নির্বাচনে সাইফুল আলমের কোনো প্রচার বা পোস্টারও ছিল না।

তেজগাঁও এলাকারই টেকনিক্যাল টিচার ট্রেনিং কলেজের নারী কেন্দ্রে (৩ নম্বর) তাবিথ মাত্র ৫ ভোট পেয়েছেন। বিপরীতে আতিকুল ইসলাম পান ১৯৮ ভোট। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৯ জন হলেও ভোট দিয়েছেন ২১১ জন। মাত্র ১৩ মাস আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ধানের শীষ ১৫৬ ভোট পেয়েছিল। 

সিটি নির্বাচনে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোডের জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহর (মাদ্রাসা ও এতিমখানা) পুরুষ কেন্দ্রে (২) ২ হাজার ৫১০ ভোটারের মধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে ৪৩২টি। এতে ধানের শীষ পায় মাত্র ১০ ভোট। আর নৌকা পায় ৩৬৬ ভোট। এই কেন্দ্রে গত জাতীয় নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫০৭ ভোট।  

ভোটের এই চিত্র সম্পর্কে তাবিথ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর কারণটা হলো তারা ভোট বদলিয়ে দিয়েছে। এ জন্যই ওনারা (নির্বাচন কমিশন) ফলাফল ঘোষণায় ভোর চারটা পর্যন্ত বিলম্ব করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটের স্লিপগুলো চেয়েছি। সেটি হাতে পেলে বুঝব, কী ঘটেছিল।’

ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩১৮টি। তাবিথ আউয়াল ৩০৬টি কেন্দ্রে এক শর কম ভোট পেয়েছেন। এই কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ তেজগাঁও, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার।

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। ঢাকা উত্তরে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১২ হাজার ৫০৯ জন। নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৮ জন। ভোট পড়ার হার ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাননি। উত্তরে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম।

কেন্দ্রভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উত্তর সিটির ২৪৪টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৫ শতাংশের কম। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ৫০টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনের শহীদ পুলিশ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর সর্বোচ্চ হারে ভোট পড়েছে উত্তরা আইডিয়াল কলেজ কেন্দ্রে, ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ।

নারীদের কেন্দ্রে ভোট কম

তুলনামূলক কম ভোট পড়েছে নারী ভোটকেন্দ্রগুলোতে। উত্তরে যে ২৪৪টি কেন্দ্রে ১৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে, তার ২৩৪টিই নারী ভোটকেন্দ্র। এই সিটিতে তিনটি কেন্দ্রে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে, যার দুটি নারীদের।

তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ভোটার ১ হাজার ১২৭ জন। এই কেন্দ্রে বৈধ ভোট পড়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে নৌকা ৪১ ও ধানের শীষ ৫ ভোট পেয়েছে।

তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের নারী কেন্দ্রের ২ হাজার ৩৪৫ ভোটারের মধ্যে ১১১ জন ভোট দিয়েছেন। যার ৮৫টি নৌকা আর ১৭টি ধানের শীষ পেয়েছে। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের মতে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে পরিবেশের কারণে অনেক সময় নারীরা ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না। এ কারণে নারীদের উপস্থিতি কম ছিল।

শেষ ৪ ঘণ্টায় ভোট বেড়েছে

উত্তরা হাইস্কুল ও কলেজের ক্যাম্পাসে আটটি ভোটকেন্দ্র ছিল। চারটি পুরুষ ও চারটি নারীদের। ভোটের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই আটটি কেন্দ্রের ৪৪টি ভোটকক্ষে কত ভোট পড়েছে, সে হিসাব নেন এই প্রতিবেদক। 

এই আটটি কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৫৭৭ জন। ভোটের দিন প্রথম চার ঘণ্টায় অর্থাৎ দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৭৫৫টি। উত্তরা হাইস্কুল থেকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বের হয়ে আসার সময় বুথের সামনে ভোটারদের কোনো লাইন বা ভিড় দেখা যায়নি। 

তবে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, উত্তরা হাইস্কুলের এই আট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০ হাজার ২৭টি। অর্থাৎ ভোট গ্রহণের শেষ চার ঘণ্টায় এই কেন্দ্রগুলোতে ভোট পড়েছে ৯ হাজার ২৭২টি। শেষার্ধে প্রতি ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন গড়ে ২ হাজার ৩১৮ জন। 

উত্তরা হাইস্কুলের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের নারী কেন্দ্রের ৬টি ভোটকক্ষে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছিল ৩৫টি। কেন্দ্রভিত্তিক ফলে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ১ হাজার ৬০১টি।  

১০ কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট

এই নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের কম উপস্থিতি। এর মধ্যেও উত্তরের ১০টি কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। উত্তরা আইডিয়াল কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ১৮০। প্রাপ্ত বৈধ ভোট ১ হাজার ৭০৫টি। এর মধ্যে নৌকা ১ হাজার ৬৮১টি আর ধানের শীষ ১৯টি।

উত্তরার ঢাকা বয়েজ অ্যান্ড গার্লস কলেজের মহিলা কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৮০ জন। ভোট পড়েছে ৭৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে নৌকা ১ হাজার ৮৬৮টি আর ধানের শীষ পেয়েছে ৩১৬টি। 

এম হাফিজউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক যে তথ্য দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। আগের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি কখনো এত কম ভোট পায়নি। এই ভোটের হারে ইলেকট্রনিক কারচুপি হয়ে গেছে বলে সন্দেহের অবকাশ থাকে।