আদালতের নথি জালিয়াতির অভিযোগে এএসআই কারাগারে

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

আদালতের নথি জালিয়াতির অভিযোগে নওগাঁর বদলগাছী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই অভিযোগে নওগাঁ জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫-এর বিচারক মো. সোহেল রানা আজ রোববার এ আদেশ দেন।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি জহুরুলকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আইনজীবী শাহানূর ইসলাম, তাঁর চাচা খাজাম উদ্দীন ও রিপন হোসেনের বিরুদ্ধে বদলগাছী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

পরে বদলগাছী থানার এএসআই মাহাবুর রহমান বাদী জহুরুলের সঙ্গে যোগসাজশে আদালতের ইস্যু করা সমনে আসামি খাজাম উদ্দীনের স্বাক্ষর জাল করেন। এরপর তিনি জাল স্বাক্ষরে আইনজীবী শাহানূরের বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে বলে আদালতের কাছে নথি দাখিল করেন। ওই নথির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শাহানূর ও মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি আসামি খাজাম উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে বদলগাছী থানার পুলিশ।

পরবর্তী সময়ে আইনজীবী শাহানূর ইসলাম আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। তাতে তিনি বলেন, মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সময় তিনি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ইতালিতে ছিলেন। বদলগাছী থানার এএসআই মাহাবুর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদী জহুরুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে মামলার বিবাদীদের হয়রানি করতে আদালতের নথি জালিয়াতি করেন। যে কারণে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

অভিযোগটি আমলে নেন আদালত। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নওগাঁ পুলিশের মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলমকে বলেন। ২০১৮ সালের ৬ মে এএসপি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলগাছী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুবায়ের হোসেন সাক্ষীদের তথ্য যাচাই না করে, আসামি শাহানূর ইসলাম দেশে না থাকলেও তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ১৫ জুলাই নওগাঁ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতের নথি জালিয়াতির অভিযোগে এসআই জুবায়ের হোসেন, এএসআই মাহাবুর রহমান ও নওগাঁ জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। ওই দিনই বিষয়টি তদন্তের জন্য নওগাঁ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ কর। তিনি গত ২৪ ডিসেম্বর আদালতে মাহাবুর ও জহুরুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ বিচারক এ আদেশ দেন।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়ের আহম্মেদ বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মাহাবুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।