আবার বসছে বিলবোর্ড

ফুটপাতে বসানো বিলবোর্ড ঢেকেছে ছাত্রলীগের ব্যানারে। গতকাল পুরানা পল্টন মোড়ে।  প্রথম আলো
ফুটপাতে বসানো বিলবোর্ড ঢেকেছে ছাত্রলীগের ব্যানারে। গতকাল পুরানা পল্টন মোড়ে। প্রথম আলো

চার বছর আগে নগরে বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো অবৈধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফের বিলবোর্ড বসানো শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে গুলিস্তান ও পুরানা পল্টনে চারটি বড় আকারের বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এসব বিলবোর্ড কে স্থাপন করেছে, খোদ ডিএসসিসিই তা বলতে পারছে না।

বিলবোর্ড নাগরিক নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বড় ধরনের ঝড়-তুফান হলে তা ভেঙে পথচারীদের ওপর পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া এসব বিলবোর্ড শহরের সৌন্দর্যও নষ্ট করে। এসব কারণেই ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নগরের সব বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করেছিল ডিএসসিসি। কিন্তু এখন আবার বিলবোর্ড বসানো শুরু হলেও ডিএসসিসির কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার প্রথম আলোকে বলেন, পল্টন ও গুলিস্তানের অবৈধ বিলবোর্ডগুলো তাঁদের চোখেও পড়েছে। কিন্তু কারা এগুলো স্থাপন করেছে, তা তাঁরা জানেন না। শিগগিরই এসব অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ করা হবে। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা ব্যক্তির প্রচারের জন্য দক্ষিণ সিটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কয়েক শ এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কারও প্রচারের দরকার হলে, নিয়ম মেনে এগুলো তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোনোক্রমেই ‘অ্যানালগ’ বিলবোর্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সম্মেলন কেন্দ্র করে নগরে ব্যানার-ফেস্টুন বাড়তে থাকে। তখনই পুরানা পল্টন মোড়ে এল মল্লিক কমপ্লেক্সের সামনে, সচিবালয়ের পূর্ব পাশে এবং গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের পূর্ব কোণে ও সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের দক্ষিণ পাশে চারটি বিলবোর্ড স্থাপনা করা হয়। প্রতিটি বিলবোর্ডই স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি। একেকটি বিলবোর্ড গড়ে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য, ২৫ ফুট প্রস্থ।

এর মধ্যে পুরানা পল্টনের বিলবোর্ডে বড় একটি রঙিন ব্যানার টানানো। গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনীর উপলক্ষে এ ব্যানারটি লাগিয়েছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম। সেই ব্যানার এখনো ঝুলছে। ব্যানারটির কারণে এল মল্লিক কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা আড়ালে পড়ে গেছে। সচিবালয়ের পূর্ব পাশের বিলবোর্ডেও জহিরুল ইসলামের ছবিসহ ব্যানার ঝুলছে। তবে গুলিস্তানের বিলবোর্ড দুটিতে কোনো ব্যানার বা বিজ্ঞাপন নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে দুটি বিলবোর্ডে ব্যানার টানিয়েছিলাম। কিন্তু এর মালিক কে জানি না। ব্যানার টানানোর পর কেউ মালিকানা দাবি করতেও আসেনি। ব্যানারগুলো কেউ সরিয়ে ফেলতে বলেনি, তাই সেগুলো সরানো হয়নি।’

আগে রাজধানীতে বিলবোর্ডের ব্যবসা করত বাংলাদেশ আউটডোর অ্যাডভারটাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা জানান, ২০১৫ সালের পর থেকে রাজধানীতে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণের ব্যবসায়ী ফোরকান উদ্দিন জানান, গত অক্টোবরের প্রথম দিকে এসব বিলবোর্ড রাতারাতি তৈরি করা হয়। এতে ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ পাশ আড়ালে পড়ে গেছে। এগুলো অপসারণে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানান, আগে নগরের অধিকাংশ বিলবোর্ড ছিল ইউনিপোলে (এক খাম্বার ওপর নির্মিত)। আর কিছু বিলবোর্ড ছিল বিভিন্ন ভবন ও বাসাবাড়ির ছাদে কয়েকটি খাম্বার সমন্বয়ে স্থাপন করা। এ ছাড়া আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যানার-ফেস্টুনে ছড়াছড়ি ছিল। ফলে রাস্তায় গাছপালা বা নীল আকাশ তেমনটা দেখা যেত না। ঝড়-তুফানে এগুলো ভেঙে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। তাই ডিএসসিসিতে বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রাজস্ব বিভাগ ও সম্পত্তি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে শিগগিরই বিলবোর্ডগুলো অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম।