খনন করা মাটি বর্ষায় ফিরবে নদের গর্ভে?

>

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে কাছেই। গত রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের কাচারীঘাট এলাকায়। প্রথম আলো
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে কাছেই। গত রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের কাচারীঘাট এলাকায়। প্রথম আলো

কর্মকর্তাদের দাবি, মাটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী রাখা হচ্ছে। তারা মাটি নিয়ে গেলে নদে যাওয়ার ভয় নেই।

ময়মনসিংহে চলছে ব্রহ্মপুত্রের খননকাজ। বর্তমানে নগরীর কাচারিঘাট এলাকায় এ খনন চলছে। তবে খননের পর উত্তোলিত মাটি ফেলা হচ্ছে নদেই। খননের স্থান থেকে এ মাটি ফেলার স্থানের দূরত্ব খুবই কম। ফলে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে মাটি আবারও নদের গর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পের কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, নদের পাড়ে জমা করা মাটি ময়মনসিংহের একাধিক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্রের মোট ২২৭ কিলোমিটার খনন হবে। জামালপুর জেলার ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ থেকে ময়মনসিংহ জেলা হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার টোক পর্যন্ত ২২৭ কিলোমিটার এ প্রকল্পের অংশ। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

খনন প্রকল্প সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদে মোট ৮৫ লাখ ঘনমিটার খনন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ৯০ কিলোমিটার অংশে খননকাজ শেষ হবে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর কাচারিঘাট এলাকায় চলছে ব্রহ্মপুত্রের খনন। খননের পর উত্তোলিত মাটি আনুমানিক ২০০ মিটারের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে জমা করা হচ্ছে। মাটি জমা রাখার জন্য নদের শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বাকি তিন দিকে বালু ফেলে পুকুরের মতো তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে মাটি। খননের মাটি রাখার জন্য পাড় নির্মাণের মাটিও তোলা হয়েছে ব্রহ্মপুত্র থেকেই। ভেকু মেশিন দিয়ে এবড়োখেবড়োভাবে ব্রহ্মপুত্র নদে গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে।

খনন প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র খননের পর উত্তোলিত মাটি মূলত বালু। এ বালু নির্মাণকাজে ব্যবহারযোগ্য। খননকাজের শুরু থেকেই বালু নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। খনন শুরুর পরপরই ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলায় উত্তোলিত বালু নিতে প্রভাবশালীদের চাপ সৃষ্টি হয়। এতে কিছুদিন দুই উপজেলায় খননকাজ বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় শুরু হয় খননকাজ। সদরে খননের বালু ফেলা হয় শহরের বিপরীত পাড়ে নদের চরে। সম্প্রতি এ বালু নিলামে বিক্রি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনন প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, নিলামে বালু বিক্রি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বালু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিলামে বালুর দাম খুব কম বলছেন। এমনকি নির্ধারিত সর্বনিম্ন দামও বলা হচ্ছে না নিলামে।

খনন প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী খননের পর উত্তোলিত মাটি বা বালু সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনে বিনা মূল্যে পাবে। আর অতিরিক্ত বালু প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হবে। ইতিমধ্যে গফরগাঁওয়ে বালু নিলামে বিক্রি হয়েছে।

খননের মাটি আবারও ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় খননের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে ময়মনসিংহের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ধারণা। পরিবেশবাদী সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, খননের পর উত্তোলিত মাটি নদে ফেলার বিষয়টি খননকাজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধকতা। বৃষ্টি হলে এ মাটি আবার নদের পানিতেই মিশে যাবে।

পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ জানান, খননের মাটি নদে ফেলা হলে খননের উদ্দেশ্য স্থিতিশীল হবে না। যদি নদেই ফেলা হয়, তাহলেও মাটি ফেলার স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা উচিত, যাতে মাটি কোনোভাবেই নদের পানিতে মিশতে না পারে।

এ বিষয়ে খনন প্রকল্পের পরিচালক রকিবুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে রাখা মাটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী রাখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মাটি নিয়ে গেলে নদে তলিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ (রাজস্ব) জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনেই কাচারিঘাট এলাকায় নদের পাশে মাটি জমা রাখা হচ্ছে। বর্ষাকাল আসার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলো মাটি নিয়ে যাবে।