রাবিতে শিক্ষকের 'ধাক্কায়' শিক্ষক হাসপাতালে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁর সহকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরের কৃষি অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পড়ে যাওয়া শিক্ষককে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

যে শিক্ষককে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর নাম অধ্যাপক মু. আলী আসগর। ধাক্কার পর পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হলে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

সহকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁর নাম অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘অধ্যাপক আলী আসগরের গায়ে তিনি হাত দেননি। তিনি পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অভিনয় করেছেন।’

গত নভেম্বর মাসে অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে একে অপরের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে অধ্যাপক আলী আসগর ক্রপ সায়েন্স বিভাগে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আদালতে রিট করেন। গত ২৬ জানুয়ারি সিন্ডিকেটে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

অধ্যাপক আলী আসগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজ দুপুর ১২টার দিকে ডিন অফিস কক্ষের একপাশে কাগজপত্র ফটোকপির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে হঠাৎ অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম এসে উপস্থিত হন। তিনি কোনো কথা না বলেই আমাকে ধাক্কা মারেন। আমি পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।’

ওই সময় কার্যালয়ে ছিলেন অনুষদের হিসাব উপপরিচালক মো. আজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক আলী আসগর কীভাবে পড়লেন তা দেখিনি। একটা শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখি, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। সেখানে অধ্যাপক খাইরুল ইসলামও ছিলেন।’

কার্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সোহেল রানা বলেন, ‘অফিসে সবার ডেস্ক উঁচু বোর্ড দিয়ে ঘেরা। তাই পাশের কিছু দেখা যায় না। ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে কোনো কথা বলতে শুনিনি। তবে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছি।’

বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওই সময় আমি বিভাগে ছিলাম না। ঘটনা শুনেই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য খবর দেওয়া হয়। ১৫-২০ মিনিট পর অধ্যাপক আলী আসগরের জ্ঞান ফিরলে আমি, অধ্যাপক কাওছার আলীসহ কয়েকজন তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিই।’

ঘটনার বিষয়ে অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের ভাষ্য, ‘বিভাগের নতুন শিক্ষকের গোপনীয় তথ্য হিসাব দপ্তরে পাঠানোর কথা ছিল। অফিস সহকারী মোতালেবের কাছে সেসব তথ্যের কাগজপত্র ছিল। অধ্যাপক আলী আসগর তাঁর কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কাগজপত্রগুলো হাইজ্যাক করে কপি করছিলেন। এই খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। অধ্যাপক আলী আসগর আমাকে দেখে ধরা পড়ে যান। তিনি হঠাৎ নিজে থেকে পড়ে যান। এতে আমিও হকচকিয়ে যাই।’ তাঁর দাবি, ‘মিডিয়া কাভারেজের জন্য তিনি (আলী আসগর) এই অভিনয় করেছেন। তিনি বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। নতুন তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি তাদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।’

অধ্যাপক আলী আসগরের ভাষ্য, ‘অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম ডিপার্টমেন্টের ‘মাসলম্যান’ বলতে যা বোঝায়, তা। তিনি আগেও আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।’

ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অফিস সহকারী মো. মোতালেব হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি অনুষদের কার্যালয়ে ঘটেছে। আর আমি বিভাগের কর্মচারী। আমি ঘটনার সময় সেখানে ছিলাম না, খবর পেয়ে সেখানে যাই।’

অনুষদ কার্যালয়ের অফিস সহকারী জয় কুমার বলেন, ‘আমি ওই কার্যালয়ে অধ্যাপক আলী আসগরের কাগজপত্র ফটোকপি করছিলাম। তিনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। পাশে অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

এ ব্যাপারে প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। দুই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সরেজমিনে খোঁজ নেব।’