ভোট কম কেন, সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে: নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি
মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ভোটবিহীন বাংলাদেশ হতে পারে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন ভোট কম পড়েছে, তা সরকার ও দলকে উপলব্ধি করতে হবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে নাসিম এ কথা বলেন।

অন্যদিকে বিএনপির সাংসদ জি এম সিরাজ বলেন, ভোটে অনাগ্রহের কারণ বর্তমান সরকার ভোট থেকে দূরে সরে গেছে। আওয়ামী লীগের ডাকে মানুষ ভোটে আসবে না। গণতন্ত্র, শান্তি চাইলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঐক্য করতে হবে।

ভোটাররা কেন ক্ষুব্ধ হয়েছেন, সেটা উপলব্ধি করার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘উপলব্ধি করতে হবে আমরা কেন ভোটবান্ধব থেকে সরে যাচ্ছি। সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভোটার ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ভোটবিহীন বাংলাদেশ হতে পারে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে এমপিরা আছি, সরকার ও দলকে উপলব্ধি করতে হবে, কী কারণে ঢাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটল। কেন কম ভোট পড়ল?’

নতুন সড়ক আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাসিম। তিনি বলেন, ‘অনেক আইন-নীতিমালা হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? কাদের কারণে আমরা আইন প্রয়োগ করতে পারছি না? কোন ফ্রাঙ্কেস্টাইনের কারণে সড়ক আইনটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না?’

নাসিম বলেন, ‘কেন ঋণখেলাপির কলঙ্ক আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। এটা নিয়ে যেন কারও অভিযোগ আমাদের শুনতে না হয়।’

নাসিম বলেন, নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী অনেক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। অনেক বিধিবিধান করেছেন। তার পরও কী কারণে নারী-শিশু নির্যাতন বেড়েই চলছে।

নাসিম বলেন, প্রলম্বিত-বিলম্বিত বিচার কোনো দিনই মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে না। আইন সংশোধন করে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দ্রুত বিচার ও কঠোর সাজা দিতে হবে।

সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জের ধরে নাসিম বলেন, ‘তাঁদের (বিএনপির সাংসদ) বক্তব্যে আমরা মাঝেমধ্যে বিস্মিত হয়ে যাই—তাঁরা বিএনপি করেন, নাকি অন্য দল করেন। এদের সঙ্গে বিএনপির আসল নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সন্দেহ হয়। এখানে তাঁদের বক্তব্যে মনে হয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলছেন। এখানকার বক্তব্য স্বস্তিদায়ক আর বাইরে গেলে অন্য চেহারা। এরা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন কি না, সেই সন্দেহ হয়।’

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে নাসিম বলেন, ‘একজন সরকারকে লাথি মারবেন! শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি। এটা কোনো ভাষা হলো? তাঁর নিজের পায়েই তো সমস্যা। নিজে তো উঠতে পারেন না। আমার চেয়েও তাঁর পায়ের অবস্থা খারাপ। আগে পা ঠিক করেন, তারপর লাথি মারার ব্যবস্থা করিয়েন। এর আগে দয়া করে লাথি মারার কথা বলবেন না।’

নাসিম বলেন, ঢাকার মেয়রেরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো পালন করতে হবে। না হলে মানুষ দূরে সরে যাবে।

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান দলটির সাংসদ জি এম সিরাজ। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে বসুন, তাহলে শান্তি, গণতন্ত্র আসবে।’
জিএম সিরাজ বলেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী যেন কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। তিনি নিশ্চিত খালেদা জিয়াকে দেখার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর একটি অংশ পাঠ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জি এম সিরাজ বলেন, ‘আপনার শ্রদ্ধেয় পিতার বক্তব্য হৃদয়ে ধারণ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।’
বিএনপির সাংসদ জি এম সিরাজ বলেন, তিনি রাজনীতি শিখেছেন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। কিন্তু এখনকার আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। এটা অচেনা আওয়ামী লীগ। যে আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্রের, মুক্তিযুদ্ধের, সে দল আজ গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে।
বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ব্যাংক, শেয়ারবাজারে লুটপাট হচ্ছে আর অর্থমন্ত্রী উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী নিজেকে বিশ্বের ১ নম্বর বলে দাবি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা কোনটি, তা বোঝা যাচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে দেশ থেকে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, সে দেশের অর্থমন্ত্রী শ্রেষ্ঠ হয় কীভাবে। তিনি ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লুটপাট তদন্তে কমিশন এবং স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি তদন্তে একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।