দৌড়ে দৌড়ে পাঠদান

ক্লাসে শিক্ষক নেই। মাঠে খেলছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার তারাগঞ্জের ২ নম্বর হাড়িয়ারকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  প্রথম আলো
ক্লাসে শিক্ষক নেই। মাঠে খেলছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার তারাগঞ্জের ২ নম্বর হাড়িয়ারকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম আলো

চার কক্ষের পাকা বিদ্যালয় ভবনের সামনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। একদল শিক্ষার্থী খাতা-কলম হাতে ছোটাছুটি করছে। অনেকে মাঠে খেলায় মেতে আছে। কয়েকজন আছে শ্রেণিকক্ষে। একজন শিক্ষক দৌড়ে এক শ্রেণিকক্ষ থেকে অন্য শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর হাড়িয়ারকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। শিক্ষক–সংকটের কারণে এ বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের পদ আছে চারটি। বর্তমানে আছেন দুজন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে একজন প্রশাসনিক কাজে কোথাও গেলেই অপরজনকে দৌড়ে দৌড়ে পাঠদান করতে হয়।

মঙ্গলবার এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে দৌড়ে দৌড়ে পাঠদান করছিলেন সহকারী শিক্ষক গজেন চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘এক ক্লাসে পড়া দিয়া অন্য ক্লাসে যাচ্ছি। সেখানে পড়া বদলায়ে পরের দিনের নতুন পড়া দিয়া আবার অন্য ক্লাসে যাচ্ছি। এভাবে দৌড়ে দৌড়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাচ্ছি। কোনো শিক্ষার্থীকে পড়া ধরারও সময় পাচ্ছি না।’

বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘স্কুল আসি বসি থাকি। কোনো দিন দু-একটা ক্লাস হয়। কোনো দিন হয় না। খেলাধুলা করে বাড়ি যাই।’

পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘স্যার-আপা খালি ক্লাসোত ঢুকে বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর দেখে দেয়। আর কয়, বাড়িত ভালো করি পড়ি আইসো। কিন্তু পড়া নেয় না। দিনাও দিনাও খালি পড়া দেখে দেয়।’

বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এখানে এখন শিক্ষার্থী আছে ২১১ জন। চারজন শিক্ষকের মধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক সুচিত্রা রানী বদলি হয়ে চলে যান। গত শনিবার প্রধান শিক্ষক নির্মল চন্দ্র অবসর নেন। এরপর এখানে কর্মরত আছেন সহকারী শিক্ষক আরতি রানী ও গজেন চন্দ্র। আরতি রানী মঙ্গলবার শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় যোগ দিতে উপজেলা সদরে যাওয়ায় গজেন চন্দ্রকে একাই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।

শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাখি খাতুন বলেন, ‘এটে মাস্টার না থাকায় ঠিকমতো ছাওয়াগুলার পড়াশোনা হওচে না। তাও এটে কায়ও মাস্টার দেওছে না।’

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কুমারেশ রায় বলেন, ‘বিদ্যালয়টির শিক্ষক সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলেছি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, খুব শিগগির বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ওই স্কুলে তিনজন শিক্ষক ছিলেন। গত শনিবার প্রধান শিক্ষক অবসর নেন। আরও দুজন শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।