ময়মনসিংহ স্টেশন: আন্তনগর ট্রেনে আসনসংকট

ময়মনসিংহ স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন সাতটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে একটি চট্টগ্রামে যায়, আর বাকি ছয়টি ট্রেন ঢাকায় যায়। এই সাতটি আন্তনগর ট্রেনে সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের সংখ্যা ৭৪৩টি। আসনের তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি। এই সমস্যা নিরসনে প্রতিটি ট্রেনে বগি বৃদ্ধি করে ময়মনসিংহ স্টেশনের জন্য আসন বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। নতুন ট্রেন চালুরও দাবি তাঁদের।

টিকিট–সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরাও বেশ সক্রিয়। তারা কাউন্টার থেকে ও অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করে সেই টিকিট চড়া দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের দৌরাত্ম্যের কাছে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বছরে দু-একবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজন কালোবাজারিকে আটক করা হলেও বেশির ভাগ কালোবাজারি থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ময়মনসিংহ স্টেশনে বরাদ্দকৃত টিকিটের তুলনায় যাত্রীর চাপ থাকে পাঁচ–ছয় গুণ। এ জন্য অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট কিনে ট্রেনে যাতায়াত করেন। টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন যাত্রী। অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করেও মাঝেমধ্যে ব্যর্থ হতে হয়। অভিযোগ, কিছু কালোবাজারি একাধিক আইডি ব্যবহার করে অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তা বাড়তি মূল্যে বিক্রি করেন।

গত সোমবার সকালে রাকিবুল হাসান নামের ঢাকাগামী এক যাত্রী ১৯ ফেব্রুয়ারির তিস্তা এক্সপ্রেসের অগ্রিম টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ভিড় ঠেলে তিনি কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। যাত্রার ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট ছাড়া হলেও মুহূর্তেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন।

মনির হাসান নামের আরেক যাত্রী বলেন, যে সময়েই কাউন্টারে টিকিট সংগ্রহ করার জন্য আসেন, বেশির ভাগ সময়ই পছন্দের ট্রেনে আসনযুক্ত টিকিট পাওয়া যায় না। হঠাৎ দু-একবার পাওয়া গেলেও সেটা কঠিন ব্যাপার। এ জন্য তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে নতুন একটি ট্রেন চালুর দাবি করে বলেন, বর্তমানে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনে বগি বৃদ্ধি করা হলে এই সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ঢাকা অভিমুখে তিস্তা এক্সপ্রেসে ১৫৩টি, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ৭৭, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ৯৯, যমুনা এক্সপ্রেসে ১০৭, হাওর এক্সপ্রেসে ৪৩ ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ৪২টি আসনসহ সব মিলিয়ে ৫২১টি আসন বরাদ্দ রয়েছে ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য। আর চট্টগ্রাম অভিমুখী বিজয় এক্সপ্রেসে ২২২টি আসন বরাদ্দ আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি ট্রেনে চারটি করে আসন বরাদ্দ থাকে।

সাধারণ যাত্রীদের জন্য যে আসনগুলো বরাদ্দ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণির আসন খুবই কম। বেশির ভাগই শোভন শ্রেণির আসন। এ নিয়েও যাত্রীদের ক্ষোভ রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর হওয়ার পর যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, রাজধানী ঢাকা কাছে হওয়ায় প্রচুরসংখ্যক যাত্রী নিয়মিত যাতায়াত করেন এই স্টেশন হয়ে। তাই ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে ও অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি শুরু হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরাদ্দকৃত টিকিট শেষ হয়ে যায়। কাউন্টারে সকাল নয়টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও সকাল সাতটা থেকেই অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশীরা কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে যান।

সম্প্রতি টিকিট কালোবাজারি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত সাপেক্ষে টিকিটে যাত্রীর নামসহ টিকিট বিক্রি শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় তিস্তা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেসে এই পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু এভাবে চলন্ত ট্রেনে টিকিট চেকিং কার্যক্রম অনেক সময়সাপেক্ষ বলে তার সুফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে কালোবাজারির মাধ্যমে একজনের টিকিট দিয়ে আরেকজন যাত্রী হরহামেশাই ভ্রমণ করছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ স্টেশন সুপার জহুরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করা হলে টিকিট–সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শুরুর পর থেকে কাউন্টারে প্রাপ্ত টিকিটের সংখ্যা কমে গেছে। তারপরও তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন স্বচ্ছভাবে টিকিট বিক্রি করার। কালোবাজারি
প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মে কিংবা কাউন্টারের সামনে কোথাও কালোবাজারি হয় না। বাইরে অন্য কোথাও হয়ে থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করা কঠিন। তবে টিকিট–সংকট নিরসনে তিনিও নতুন ট্রেন চালু ও বগি বৃদ্ধি করে আসন বরাদ্দের পক্ষে মত দেন। 

ময়মনসিংহ স্টেশন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে মোট ৮৭ হাজার ২৪৬ জন যাত্রী টিকিট কেটেছেন। এর মধ্যে শুধু আন্তনগর ট্রেনের যাত্রী
ছিলেন ৬৭ হাজার ১৭৮ জন, আর আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৬ টাকার।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৭৮ হাজার ৯২৫ জন যাত্রী টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৯০১ জন আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কেটেছেন। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৯০ লাখ ৩১ হাজার ৯২০ টাকা। তাঁদের অধিকাংশই আসনবিহীন স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন।

এ ছাড়া তিস্তা, হাওর, বিজয় ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস সপ্তাহে এক দিন করে বন্ধ থাকে। এই দিনগুলোতে অন্য ট্রেনের ওপর নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের।