মা-মেয়ের লাশ ছিল খাটে, ছেলের লাশ ছিল মেঝেতে

বাবা রাকিবউদ্দিনের সঙ্গে ফারহান ও লাইভী। ছবি: সংগৃহীত
বাবা রাকিবউদ্দিনের সঙ্গে ফারহান ও লাইভী। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান রোডের একটি বাড়ির পাঁচতলার ফ্ল্যাটে দুই শিশু সন্তানসহ মায়ের লাশ পড়েছিল। কয়েক দিন ধরে আত্মীয়দের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছিল না। অবশেষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকজন আত্মীয় তাদের খোঁজ নিতে গিয়ে বাসাটি বন্ধ পান। তখন বাসা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এ সময় আত্মীয়রা ঘটনাটি দক্ষিণখান থানায় জানায়। পরে রাতে পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে মা ও তার দুই সন্তানের গলিত লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ বলেছে, নিহতেরা হলো মুন্নী বেগম (৩৮), তাঁর ছেলে ফারহান উদ্দিন খান (১২) ও মেয়ে লাইভী ভূঁইয়া (৩)। মুন্নীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা মা ও দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ফারহান বাসার পাশে কেসি স্কুলে পড়ত। ফারহানের বাবা রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া গুলশানে টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী। তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

রাকিব উদ্দিন সপরিবারে প্রেমবাগান রোডের কেসি স্কুলের পাশে ৮৩৮ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় থাকতেন।

আজ রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রেমবাগানে ভবনটির সামনে উৎসুক মানুষের ভিড়। উত্তরা বিভাগের পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা ভবনটির ভেতর থেকে কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তারা ওই বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। গণমাধ্যম কর্মীরা তথ্য সংগ্রহের জন্য ভবনটির সামনে অপেক্ষা করছেন।

দক্ষিণখান থানার পুলিশ জানায়, মুন্নীর আত্মীয়দের দেওয়া খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশ দরজা ভেঙে ওই বাসায় ঢোকেন। এ সময় মুন্নী ও তাঁর মেয়ের লাশ খাটে এবং ফারহানের লাশ মেঝেতে পড়েছিল। বাসা থেকে কোনো মালামাল খোয়া যাওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। ।

প্রতিবেশীরা জানান, রাকিবউদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের উঠতে নামতে দেখা গেলেও কয়েক দিন ধরেই তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। রাকিবউদ্দিন জুয়া খেলতেন বলে শুনেছেন। তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, লাশগুলোতে পচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই সন্তানসহ মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গৃহকর্তা রাকিবউদ্দিনকে খুঁজছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে গ্রিলের সঙ্গে ঝুলছিল লাশ

এদিকে আজ সকালে পুলিশ মাতুয়াইলে ফ্রেন্ডশিপ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষ থেকে মোবারক করিম (২৬) নামে এক যুবকের গলায় তোয়ালে প্যাঁচানো লাশ উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর হাসপাতালটির পরিচালক জামাল হোসেন পালিয়ে গেছেন। মোবারক নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ছিলেন।

পুলিশ বলেছে, মোবারকের পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আলামত দেখে মনে হচ্ছে, এটি হত্যাকাণ্ড।

মোবারকের পরিবারের অভিযোগ, ফ্রেন্ডশিপ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক জামাল হোসেন মোবারককে ডেকে দপ্তরে নিয়ে হত্যা করে লাশ তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
আট মাসে আগে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রী সাবেকুন নাহারকে নিয়ে দনিয়ায় থাকতেন। তাঁর বাড়ি ভোলার লালমোহনের ধুলি গৌরীনগরে এবং বাবার নাম সোলায়মান হোসেন।

ডেমরা থানার পুলিশ জানায়, আজ সকাল ১০টার দিকে মাতুয়াইলে ফ্রেন্ডশিপ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই হাসপাতালে যায়। হাসপাতালের পরিচালক (বিপণন) জামাল হোসেনের কক্ষের দরজা ভেঙে জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় তোয়ালে প্যাঁচানো মোবারকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বেসরকারি প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মোবারক কর্মস্থলে যান। বেলা দুইটার দিকে স্ত্রী ফোন দিলে তিনি ব্যস্ত থাকার কথা জানান। সন্ধ্যার পর স্ত্রী আবার মোবারকের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তখন অধিকাংশ সময় মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ১০টার পর মোবারকের মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়।

মোবারকের খালাতো ভাই নাহিদ হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, মোবারক প্রতিদিন রাতে ফিরতেন। কিন্তু গতকাল রাতে বাসায় ফিরে আসেননি। স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও মোবারকের সন্ধান পাননি। আজ সকালে একপর্যায়ে তারা মাতুয়াইলে ফ্রেন্ডশিপ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মোবারকের লাশ আছে জানতে পারেন।

নাহিদ জানান, আগে জামাল সাইনবোর্ডের প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে জামালের সঙ্গে মোবারকের সুসম্পর্ক ছিল। ফ্রেন্ডশিপ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে জামালই মোবারককে ডেকে এনেছিলেন। জামালের দপ্তরে মোবারককে ঢুকতে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। তারা মনে করছেন, জামালই মোবারককে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।

পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রাকিবুল হাসান আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড এবং খুনি বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালিয়ে গেছেন। জামালকে ধরতে পারলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।