সুষ্ঠু নির্বাচন ফেরাতে আন্দোলন চালাতে হবে: হাফিজউদ্দিন

এম হাফিজউদ্দিন খান
এম হাফিজউদ্দিন খান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, ভবিষ্যতেও তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখেন না। তাই দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে জনগণকে সোচ্চার করে তুলতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন ফেরাতে যত বেশি প্রয়োজন, আন্দোলন চালাতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমার একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা বদলের একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার এটিই মূল ভিত্তি। অথচ দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মানুষ নির্বাচন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের সামনে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সবাই মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেন, নানা দিক থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, এটা উৎসাহব্যঞ্জক। একই সঙ্গে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ আছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার করেও লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। সংস্কারের যথাযথ বাস্তবায়ন ও সমভাবে আইনের প্রয়োগ না হলে সংস্কার করে কিছু হবে না। নির্বাচন ও দুর্নীতি দুটো বিষয় নিয়েই কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ আর ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পড়েছে ৩০ শতাংশের কম। অথচ আমরা জানি, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের হার বেশি হয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেই ভোট জালিয়াতি বের করতে পারে। ২০ দফা সংস্কার প্রস্তাবের পরিবর্তে এক দফা দাবি তোলা দরকার, আর তা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

সুজনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংস্কারে ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হলে শুধু অভিযান চালালে হবে না, ব্যবস্থা বদলাতে হবে। সরকারের সব কার্যক্রম উন্মুক্ত করতে জনগণকেও সক্রিয় হতে হবে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে আছে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন করতে সুজন নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এটিকে স্বাগত জানাই।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সুজনের সংস্কার প্রস্তাব যথার্থ। এ আন্দোলনে সবার যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ভোট নিয়ে জনগণের অনাগ্রহ নিয়ে প্রধান দুই দলেরই কাজ করা উচিত।

আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, দেশে নতুন ধরনের কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চলছে। এ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়ে সময়মতো এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা হয়। কিন্তু বিরোধীদের জয়ের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

দুপুরে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সুজনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সুজনের কমিটি গঠন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। পরিবার থেকে সুশাসনের চর্চা শুরু করার আহ্বান জানান তাঁরা।