বন্ধুকে দিয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টা

বগুড়ায় স্বামীর বিরুদ্ধে করা নির্যাতনের মামলা তুলে না নেওয়ায় ‘শায়েস্তা’ করতে বন্ধুকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের পর ব্লেড দিয়ে শরীর জখম ও মাথার চুল কেটে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে (২৪) বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন গৃহবধূর স্বামী ও তাঁর বন্ধু।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূর শরীরে পোড়া ক্ষত এবং ধারালো কিছু দিয়ে আঘাতের জখম রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই ক্রমাগত যৌতুক দাবি করতেন ওই গৃহবধূর স্বামী। যৌতুকের জন্য প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করতেন। অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে বগুড়া আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তিনি। মামলা করার পর থেকেই তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন স্বামী। গৃহবধূর অভিযোগ, আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি দরজা বন্ধ করে বাসায় কাজ করছিলেন। এ সময় তাঁর স্বামী এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাচীর টপকে বাসার ভেতরে ঢোকেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ চেপে ধরে তাঁকে ঘরে নেওয়া হয়। প্রথমে হাত, পা ও মুখ বেঁধে মারধর করা হয়। পরে ওই বন্ধু তাঁকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে স্বামী ও তাঁর বন্ধু মিলে তাঁর ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। একপর্যায়ে তাঁর মাথার চুল কেটে দেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে দাহ্য পদার্থ শরীরে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। এরপর স্বামী ও তাঁর বন্ধু পালিয়ে যান। পরে ওই গৃহবধূর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গৃহবধূর মা অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের পর বেশ কয়েকবার যৌতুক দিয়েছেন। কিন্তু তবু তাঁর মেয়ের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। শনিবার মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে বাসায় কাজ করছিলেন তাঁর মেয়ে। এ সময় বাসায় কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতন চালান তাঁরা।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আম্বার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন, মামলা তুলে না নেওয়ায় ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতন করেন স্বামী ও তাঁর বন্ধু। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। অভিযুক্ত দুজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।