চট্টগ্রামে মেয়র পদে রেজাউল, ঢাকায় সাংসদ পদে মহিউদ্দিন

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর পরিবর্তে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। আর ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় চট্টগ্রামের মেয়র পদ ছাড়াও ও পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

ঢাকা-১০ আসনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতই ছিল। তবে চট্টগ্রামে মেয়র পদে আ জ ম নাছিরের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে—দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে এমন আলোচনা ছিল। সরকার দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও আ জ ম নাছিরকে সেই মর্যাদা দেওয়া হয়নি। দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। বিকল্প হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতার নাম এলেও শেষ পর্যন্ত রেজাউল করিমকে বেছে নেওয়া হয়। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১৯ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন। গতকাল সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলম ছাড়া বাকি ১৮ জনই উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রেজাউল করিম। তিনি রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করব।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল আজ রোববার ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। আগামী মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া রাতে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন নিয়ে আগামী সোমবার আলোচনা হবে। সেদিন চট্টগ্রাম সিটির ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দল–সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

পাঁচ আসনে আ.লীগের প্রার্থী ঘোষণা
ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ ছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে তাপস মেয়র নির্বাচিত হন।

পরে এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। তবে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোট হবে আগামী ২১ মার্চ। তবে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করেনি ইসি। আজ এই দুই আসনেরও ভোটের তারিখ ঘোষণা করতে পারে ইসি।

বাগেরহাট–৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিরুল আলম ওরফে মিলন। এই আসনের সাংসদ মোজাম্মেল হোসেন মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। গাইবান্ধা–৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম। এই আসনের সাংসদ ইউনুস আলী সরকারও সম্প্রতি মারা যান।

যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। সাংসদ ইসমাত আরা সাদেকের মৃতুতে এই আসনটি শূন্য হয়। আর বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাহাদারা মান্নান। তিনি এই আসনের প্রয়াত সাংসদ আবদুল মান্নানের স্ত্রী।

নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে বাসস জানায়, গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে পারাটা এক বিরাট অর্জন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এক দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বলেই দেশব্যাপী উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে।

ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার জন্য দলের নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারার মতো বড় আর কিছু নেই। গত এক দশকে তাঁর সরকার দেশব্যাপী যে উন্নয়ন করেছে, অতীতে কোনো সরকার সেটা করতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে কেউ তাঁর দলকে ভোট দিক বা না দিক, আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্যই সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছে। তাঁর সরকার শুধু শহর নয় বরং একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে দেশে চলমান অভিযানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই অভিযান অব্যাহত রাখার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।