কুয়েতে মানব পাচারে যুক্ত বাংলাদেশের সাংসদ

কাজী শহিদ ইসলাম।
কাজী শহিদ ইসলাম।

কুয়েতে মানব পাচারে যুক্ত বাংলাদেশের তিন পাচারকারীর একজন সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম। সেখানে গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর আগেই তিনি দেশে চলে এসেছেন। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় পত্রিকা এ খবর দিয়েছে।

স্বতন্ত্র এই সাংসদসহ তিনজনের ওই চক্র অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে বলে দাবি কুয়েত সিআইডির।

গত বুধবার কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাসআরব টাইমস  সাংসদসহ বাংলাদেশের মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো অভিযুক্ত সাংসদের নাম প্রচার করেনি। তবে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গতকাল শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত সাংসদের নাম কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল। তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ।

যোগাযোগ করা হলে সাংসদ শহিদ ইসলাম গত শুক্রবার প্রথম আলোর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি এ ধরনের কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি।’

কাজী শহিদ ইসলামের ফেসবুক ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রপ্তানিতে যুক্ত। এ ছাড়া তিনি বেসরকারি খাতের ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্র এই সাংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।

আরব টাইমস–এর গত বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বাংলাদেশির একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাকি দুজন কুয়েত ছেড়ে পালিয়ে যান। চক্রটি ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে কুয়েতে এনে অন্তত ৫ কোটি কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা আয় করেছে। ওই চক্রের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের একজন সাংসদ, যিনি নিয়মিতভাবে ঢাকা–কুয়েত আসা–যাওয়া করেন। তিনি কখনো কুয়েতে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকেন না।

>

কুয়েত সিআইডির অভিযান। পালিয়ে এসেছেন সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম। তিন বাংলাদেশির একজন গ্রেপ্তার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচারের বিরুদ্ধে কুয়েতের সিআইডির অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এক সপ্তাহ আগে সাংসদ কুয়েত ছেড়ে যান। কুয়েতে তাঁর পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না।

আল কাবাস প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস গত বৃহস্পতিবার আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানির জন্য সরকারি কার্যাদেশ পেতে ঘুষ হিসেবে সেখানকার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি দিয়েছেন ওই সাংসদ। সাংসদ তাঁর সম্পদের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে সেখানকার এক নাগরিকের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে ব্যবসা শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ বিষয়ে জানতে কুয়েত সিআইডির সঙ্গে দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তদন্ত চলমান বলে সিআইডি দূতাবাসকে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা জানিয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের অন্য একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি জানতে সিআইডিতে যোগাযোগ করা হয়। বিস্তারিত কিছু না জানালেও আটক একজন বাংলাদেশির মাধ্যমে ওই অপরাধী চক্রের মানব পাচারে যুক্ততার বিষয়টি সিআইডি দূতাবাসকে জানিয়েছে।

দূতাবাসের সূত্রটি জানিয়েছে, মানব পাচারের ওই চক্রে সিলেটের সুলতান ও গাজীপুরের তারেকের যুক্ত থাকার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে সুলতান পালিয়ে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ হয়ে ইউরোপে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তারেককে মাস দেড়েক আগে লোকজন পিটিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠিয়েছিল বলে খবর রয়েছে।