দীঘিনালায় শুধু নামেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন কেবল নামেই আছে। মর্যাদায় তৃতীয় শ্রেণির হলেও দীঘিনালাসহ রাঙামাটির দুটি উপজেলার আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালন করতে হয় এই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে। স্টেশনটির আগুন নেভানোর সম্বল একটি মাত্র বড় গাড়ি—যা পাহাড়ি পথে চলার অনুপযোগী। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত লোকজনদের উদ্ধারে সরঞ্জামই ও অ্যাম্বুলেন্স নেই এই ফায়ার স্টেশনে।

দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশনে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২ জুলাই দীঘিনালা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটি চালু হওয়ার পর এ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দমকল কর্মীরা দীঘিনালা, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলাসহ তিনটি উপজেলার আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালন করে। তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন হলেও পর্যাপ্ত জনবল নেই। কয়েক মাস ধরে স্টেশন কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। চালক দুজন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন একজন। একজন লিডার ও আটজন ফায়ারম্যান (দমকলকর্মী) নিয়ে তিনটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আগুন নেভানোর কাজের জন্য দুটি ওয়াটার মিস্ট মোটরসাইকেল থাকলেও একটি দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বিকল। ১ হাজার ৮ শ কেজি পানি ধারণক্ষমতার একটি মাত্র গাড়ি থাকলেও আগুন নেভানোর জন্য যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে পানি ফেলে পাহাড় উঠতে হয়। গাড়িটি বড় হওয়াও গন্তব্যে পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগে। 

ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ২০১৬ সালে ৩টি, ২০১৭ সালে ১১টি, ২০১৮ সালে ৫টি ও ২০১৯ সালে ২৭টি আগুন নেভানোর কাজ করেছে দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। 

দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার (দলনেতা) কমল মনি চাকমা বলেন, ‘আমাদের স্টেশনে ১২ শ লিটার পানির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন যে গাড়ি আছে তা নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের আঁকাবাঁকা পথে চলতে অনেক সমস্যা হয়। ২০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে ৬ ফুট প্রস্থের গাড়িটি নিয়ে পাহাড় ওঠা যায় না। গাড়ি থেকে পানি ফেলে উঠতে হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলায় যেতেই এক ঘণ্টা সময় লাগে। পিকআপ হলে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে পৌঁছানো যেত। লংগদু উপজেলায় যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে পিকআপ হলে ১ ঘণ্টায় পৌঁছানো যেত। একটি মাত্র গাড়ি কোনো উপজেলায় আগুন নেভানোর কাজে গেলে অন্য দুই উপজেলা সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে। সাজেকে প্রচুর সংখ্যক পর্যটকবাহী গাড়ি আসে। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধারের কোনো সরঞ্জাম আমাদের কাছে নেই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্যও কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই।’ 

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন উপজেলার জন্য একটি মাত্র ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তাও আবার তৃতীয় শ্রেণির এটা খুবই দুঃখজনক। দীঘিনালা উপজেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। রাঙামাটির দুইটি উপজেলা ও সাজেক পর্যটন এলাকায় যেতে হলে দীঘিনালা হয়ে যেতে হয়। এসব এলাকায় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এ ফায়ার সার্ভিসকে সামলাতে হয়। এটিকে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে উন্নীত করা খুবই জরুরি। আমি বিষয়টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’ 

 ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাঙামাটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রতন কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলো ধীরে ধীরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়ে যাবে। আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে এটা ঠিক। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় স্টেশন কর্মকর্তার পদটিও শূন্য রয়েছে।’