চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন: বিতর্কিত কাউন্সিলরদের দৌড়ঝাঁপ

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চলছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত অন্তত ১০ জন বর্তমান কাউন্সিলর পুনরায় দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা–তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে চট্টগ্রামের মন্ত্রী সাংসদদের দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনীত করার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গত রোববার চট্টগ্রাম সিটির নতুন মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ স্থানীয় মন্ত্রী–সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই নির্দেশ দেন। আগামীকাল বুধবার ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণার কথা রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে চট্টগ্রামের মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এতে বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বাদ দেওয়া হয়। মেয়র পদে প্রার্থী পরিবর্তনের পর বর্তমানের বিতর্কিত কাউন্সিলরদের মধ্যে বাদ পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিতর্কিত বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মো. আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, সরাইপাড়া ওয়ার্ডের মো. সাবের আহমদ, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মো. হোসেন হিরণ, পশ্চিম ষোলশহরের মোবারক আলী অন্যতম। তাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, সন্ত্রাস, আধিপত্য বিস্তারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

আবার আলকরণ ওয়ার্ডের তারেক সোলেমান সেলিম ও পাঠানটুলীর আবদুল কাদেরের নাম সরকারের করা মাদকের পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় ছিল। পশ্চিম মাদারবাড়ির গোলাম মো. জোবায়েরের বিরুদ্ধে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে।

পাহাড়কেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ

এ ছাড়া জালালাবাদ ওয়ার্ডের শাহেদ ইকবাল ওরফে বাবু, লালখান বাজারের এ এফ কবির আহমেদ ওরফে মানিক, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় দখল করে বসতি স্থাপনকারীদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মো. হোসেন হিরণও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।

তবে জহুরুল আলম এবং এ এফ কবির আহমেদ মানিক তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জহুরুল আলম দাবি করেন, ‘পাহাড় কাটার যে ঘটনাটার কথা বলা হয়, তাতে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। তিনি পাহাড় দখল করেননি।

এ এফ কবির আহমেদ মানিক বলেন, ‘দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। চূড়ান্ত করবে দল। কোনো দখলদারির সঙ্গে জড়িত নই।’

শাহেদ ইকবাল বলেন, ‘পাহাড়ের দখলদারদের বিরুদ্ধে আমি কথা বলে আসছি। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’

খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ

দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় একটি খুনের মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালে নূর এলাহী নামের এক যুবলীগ কর্মী খুন হন। এ মামলার আসামি তিনি। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

তৌফিক আহমেদ চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সরাইপাড়া ওয়ার্ডের মো. সাবের আহমদের বিরুদ্ধে গত বছর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়তলী বাজারে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সাবের আহমদ বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে আগ্রাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আগে একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। বর্তমানে মামলাটি স্থগিত রয়েছে। 

সাংসদদের তালিকা

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে এবং সংরক্ষিত ১৪টির মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। এবার অনেক বর্তমান কাউন্সিলরকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা বাছাইয়ের জন্য স্থানীয় কয়েকজন সাংসদের কাছ থেকে তালিকা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এসব তালিকা যাচাই–বাছাইয়ের পাশাপাশি প্রার্থীদের অতীত ইতিহাস বিবেচনা করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সাংসদদের পাঠানো তালিকায় অনেক নতুন প্রার্থীর নাম রয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।