জনদুর্ভোগ কমাতে ভোটের প্রচারে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত

ঢাকার সিটি নির্বাচনের প্রচার ঘিরে জনদুর্ভোগ ও পরিবেশদূষণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফাইল ছবি
ঢাকার সিটি নির্বাচনের প্রচার ঘিরে জনদুর্ভোগ ও পরিবেশদূষণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফাইল ছবি

জনদুর্ভোগ ও শব্দদূষণ কমাতে ভোটের প্রচারে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি করতে চায় ইসি। এ জন্য নির্ধারিত স্থানে পোস্টার টানানো বাধ্যতামূলক করা, পথসভা বন্ধ এবং নির্ধারিত জায়গায় শোভাযাত্রা ও জনসভার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়াসহ কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি।

বর্তমান নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ইসি প্রচারে এ ধরনের বিধিনিষেধ প্রয়োগ করতে পারে না। ইসি বলছে, উপনির্বাচনের (২১ মার্চ) আগে বিধিমালা সংশোধনের জন্য যথেষ্ট সময় নেই। তাই এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রচারের নতুন নিয়ম কার্যকর করতে চায় তারা। ২৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে পাঁচটি প্রস্তাব নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রার্থীরা যেখানে–সেখানে পোস্টার ঝোলাতে পারবেন না। এ জন্য ২১টি জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এসব জায়গায় স্ট্যান্ড স্থাপন করে পোস্টার ঝোলাতে পারবেন। প্রার্থীদের মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন আইনে অনুমোদিত শব্দমাত্রা মানতে হবে। একেকটি জায়গায় প্রার্থীদের পর্যায়ক্রমে শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

ইসির এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জনদুর্ভোগ তৈরি করে বা পরিবেশদূষণ করে, শব্দদূষণ করে প্রচারে এ ধরনের কাজ করা উচিত নয়। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। রাস্তাঘাট বন্ধ করে প্রচার করা ঠিক নয়। পোস্টারের ব্যবহার সীমিত করা হলে সেটা ভালো হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইসির প্রস্তাবগুলো কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট নয়। তাঁর প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কী এমন সৌহার্দ্য আছে যে ইসির প্রস্তাব মেনে নির্বাচনী প্রচার চালাতে এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা করবেন। এসব প্রস্তাব নিয়ে তিনি দলের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। 

ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে অনুমোদিত স্থায়ী স্থাপনায়। ক্যাম্পে পোস্টার, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা যাবে। প্রার্থীরা ইচ্ছেমতো যেখানে–সেখানে শোভাযাত্রা, পদযাত্রা করতে পারবেন না। প্রার্থীদের শোভাযাত্রা ও পদযাত্রার জন্য নির্দিষ্ট দিন ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত জায়গায় শোভাযাত্রা, পদযাত্রা করতে হবে। জনসভার জন্য ইসি এক বা একাধিক জায়গা নির্দিষ্ট করে দেবে, অনুমোদন নিয়ে এই জায়গায় প্রার্থীরা জনসভা করবেন। রাস্তার ফুটপাতে কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না। রাস্তায় কোনো পথসভা করা যাবে না। প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সমঝোতা করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীদের ভোটের প্রচারে যাতে জনদুর্ভোগ কম হয়, পরিবেশ ও শব্দদূষণ কমানো যায়, এ জন্য তাঁরা কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি এ প্রস্তাবগুলো নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে ইসি মতবিনিময় করবে। প্রার্থীরা রাজি হলে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

>ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে নির্ধারিত স্থানে পোস্টার টানানো, পথসভা বন্ধ এবং নির্ধারিত জায়গায় শোভাযাত্রাসহ কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নগরজুড়ে পোস্টারে ছেয়ে ফেলা, দিনভর বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশব্দে মাইকিং, রাস্তা বন্ধ করে প্রচার চালানোর ঘটনায় জনদুর্ভোগ ও পরিবেশদূষণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। তাই আসন্ন উপনির্বাচনে এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশনাররা এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।

এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের পরিবেশদূষণ কমাতে নতুন কোনো পদ্ধতিতে প্রচার চালানো যায় কি না, তা নিয়ে কমিশন প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করবে। প্রার্থী ও কমিশন একমত হলে বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আগামী ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রার্থীসহ ছয়জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ আসনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

ইসির এ পদক্ষেপের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রস্তাবগুলো ভালো। সদিচ্ছা থাকলে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। এর পাশাপাশি ইসি প্রার্থীদের নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে বা ইসির সহায়তায় সুজনের মতো সংগঠন এটা আয়োজন করতে পারে। সব প্রার্থীর জন্য ইসি নির্দিষ্টসংখ্যক কমন (একটি পোস্টারে সব প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক) পোস্টার করতে পারে। প্রার্থীরা খরচ দেবে, ইসি কমন পোস্টার করে দেবে।

তবে সুজন সম্পাদক বলেন, আচরণবিধি সংশোধনের মতো সময় নেই, এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিধিমালা করা এবং যেকোনো নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।