'সত্য প্রচার করলেও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে'

উগ্রবাদ রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা কি হওয়া উচিত—এই ছিল সেমিনারের আলোচনার বিষয়। তবে আজ শনিবার প্রেসক্লাবের এই আলোচনায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শীর্ষ ব্যক্তিরা সরকার কীভাবে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরেছে, সে অভিযোগ থেকে শুরু করে, জঙ্গি দমনে পুলিশি ভাষ্যের ও তদন্তের ফাঁক–ফোকরের কথা তোলেন।

বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে ওই সেমিনারের আয়োজক ছিল সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিসার্ফ)। সংবাদমাধ্যম কীভাবে উগ্রবাদ প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে, উগ্রবাদবিষয়ক সংবাদ প্রচারে কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত, তা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেছেন, সরকারের কাজ গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা নয়, কিন্তু সত্য সংবাদ প্রচার করলেও তা করা হচ্ছে। এতে ক্ষতি হয়ে যায়। নির্বাচনের সময় যেখানে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, সেখানে বিএনপির প্রতিনিধি বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে, আবার যেখানে বিএনপি শক্তিশালী, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যখনই প্রচার করা হচ্ছে, অমুক কেন্দ্রে এজেন্ট নেই, তিনি আরেকজন সাংবাদিক পাঠান ওই প্রতিনিধির খোঁজে। এমনও হয় যে প্রতিনিধি হয়তো ঘর থেকে বের হননি। এই সংবাদ প্রচার সরকারের জন্য ভালো। কিন্তু বলা হচ্ছে ক্ষতি হয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষের তাঁদের প্রতি ভরসা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

অনলাইন প্রচার কীভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, সে সম্পর্কেও মন্তব্য করেন মোজাম্মেল বাবু । তিনি বলেন, তাঁকে ভিডিও কনটেন্টের প্রতিটি লাইনের জন্য জবাবদিহি করতে হয়, আর তাঁর রিপোর্টারকে তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু পোর্টালগুলোর এই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে তাদের এই বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণের কথা বলেন।

গাজী টিভি ও সারাবাংলা ডট নেটের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সংবাদমাধ্যমকে দোষ দেওয়া সবচেয়ে সহজ। সংবাদমাধ্যমের কাছে মানুষের একটা চাহিদা আছে, তার জোগান তাঁকে দিতে হয়। সে কারণে অবাধ তথ্যপ্রবাহের একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে। হোলি আর্টিজানে হামলার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো নির্দেশনা ছিল না। তিনি উগ্রবাদবিরোধী অভিযান নিয়ে পুলিশের যে ভাষ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, পুলিশ নিজেই উদ্ধার দেখায় ‘জিহাদি বই’। অথচ তারা অনায়াসে উগ্রবাদী বই লিখতে পারে। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আরও বলেন, সবাই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করার কথা বলেন। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। ভালো সাংবাদিকতার পূর্ব শর্ত হলো ভালো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

এ টি এন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর মানুষ ‘উগ্রবাদী হামলা’র বিষয়টা বুঝেছে। এর আগে এই সরকারের আমলেই ব্লগার খুন হয়েছেন, জঙ্গি হামলা হয়েছে। সেগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা ছিল।

বেসরকারি চ্যানেল দেশ টিভির বার্তা বিভাগের সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক বলেন, যেকোনো ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ভাষ্য প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে তিনি সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও তাঁদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের কথা তোলেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর হয়তো জানা যায়, ওই সন্ত্রাসী মাস দুয়েক আগে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন, নজরদারিতে ছিলেন কি না, সে বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে বলা দরকার।

বক্তাদের কেউ কেউ ওয়াজের নামে অশ্লীলতা, উগ্রবাদ প্রচার বন্ধে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, যাঁরা অশ্লীল ওয়াজ করেন, তাঁদের যেন আমন্ত্রণ জানানো না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে পুলিশ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক, এনটিভির বার্তাপ্রধান জহিরুল আলম, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম ও একুশে টিভির মোস্তফা মহসিন।

গোলটেবিলের সমন্বয়ক ছিলেন সিসার্ফের নির্বাহী পরিচালক শবনম আজিম।