সাহিত্যিকেরা আসছেন মেলায়

মঞ্চে-নেপথ্যে: সিরাজুদ্দীন হোসেন, জোরে শ্বাস নাও: মনজুরে মওলা, মনোজবাবুদের বাড়ি: হরিশংকর জলদাস, প্রেমকে যখন বানিয়ে ফেলেছি খুনি: জাহিদ হায়দার
মঞ্চে-নেপথ্যে: সিরাজুদ্দীন হোসেন, জোরে শ্বাস নাও: মনজুরে মওলা, মনোজবাবুদের বাড়ি: হরিশংকর জলদাস, প্রেমকে যখন বানিয়ে ফেলেছি খুনি: জাহিদ হায়দার

সাহিত্যদেশ স্টলের ভেতরে দেখা গেল একটা বড় কাগজে লেখা, ‘আগে বিল পেমেন্ট করুন, পরে অটোগ্রাফ নিন, ফটোসেশন করুন।’

কৌতূহলী না হয়ে উপায় নেই। ‘আপনারা কেন লিখে রেখেছেন এ কথা’—জিজ্ঞেস করি সামনে থাকা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে।

তিনি বললেন তাঁর বিড়ম্বনার কথা। কখনো কোনো তরুণ লেখকের সঙ্গে একসঙ্গে অনেক তরুণ এসে পটাপট হাতে তুলে নেন অনেকগুলো বই। তারপর সেলফি তুলতে থাকেন। লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। তারপর যখন হিসাবনিকাশের প্রশ্ন আসে, দেখা যায়, কয়েকটি বই বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে।

এ বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার জন্যই নোটিশটা।

দুই তরুণী হেঁটে যাচ্ছিলেন এমন একটি স্টলের সামনে দিয়ে, যেখানে মোটিভেশনাল বইয়ের ছড়াছড়ি। একজন বলে উঠলেন, ‘এটা কোনো কন্টেন্ট হলো!’

আগ্রহ থেকে জানতে চাই, ‘কী হয়েছে, বলা যাবে?’

‘কেন যাবে না। ভেবে দেখুন, একটা বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘এ প্লাস তো পাইলা না!’ ভাবতে পারেন! বইমেলায় এই সব বই বিক্রি হচ্ছে!’

‘মোটিভেশনাল বই তো আপনার কোনো ক্ষতি করছে না!’

‘আরে ভাই, রুচি বলে কোনো ব্যাপার থাকবে না? আপনিই বলেন, “এ প্লাস তো পাইলা না” দিয়ে ঠিক কোন মোটিভেশনের কাজ হচ্ছে? যত্তসব!’

যিনি কথা বলছিলেন, তাঁর নাম ডা. বুশরান সামি। দন্তচিকিৎসক তিনি। যাওয়ার আগে বললেন, ‘ভদ্রলোক লিখেছেন, বিক্রি হচ্ছে বই। তাই আর তাঁর নাম বললাম না। কাণ্ডজ্ঞান থাকলে কেউ এভাবে লিখবে না।’

সাহিত্যিক আনিসুল হক ছিলেন প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে। ছবি তুলছিলেন, অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন, সেলফি তুলছিলেন অন্যদের সঙ্গে। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন ছিলেন ঝিঙেফুলের স্টলে। বেশ গম্ভীর মুখে ছড়ার প্রুফ দেখছিলেন তিনি। ঝিঙেফুল থেকে তাঁর নতুন বই বিড়ালের গল্প এসেছে। তিনি বরলেন, ‘যাঁরা বিড়াল পোষেন, বিড়াল ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এই বই। এবং যাঁরা বিড়াল ভয় পান, তাঁদের জন্যও এই বই।’ এখান থেকেই এসেছে ফারহানা তানিয়ার ছোটদের লালন বইটি।

সেবা প্রকাশনীর সামনে বেশ ভিড়। ভিড় ঠেলে পৌঁছে যাই প্রকাশনীর মমিনুল ইসলামের কাছে। বলি, ‘আপনার এখানে ভিড় লেগেই আছে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু একটু আগে বর্ণ বিচিত্রা স্টলে গিয়েছিলাম। সেখানে মিরাজুর রহমান খান বলেছেন, বিক্রিবাট্টা ভালো না একেবারেই। আপনি এ নিয়ে কী বলবেন?’

মমিনুল অনায়াসে বললেন, ‘গতবারের তুলনায় বিক্রি কম।’

মিরাজুর রহমান খানের কাছে ফিরে গেলে তিনি সামনের একটি প্যাভিলিয়নের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘দেখেন ওখানে কত মানুষের ভিড়! কিন্তু কিনছে কয়জন?’

ভুল বলেননি তিনি। বইয়ের পাতা ওল্টানোর মানুষ অনেক। বই কেনার মানুষ এখনো কম।

এরই মধ্যে বাতিঘরের সামনে দেখা গেল দুই কবিকে। তুষার দাশ এবং জুয়েল মাজহার। দ্বিতীয়জনের রাত্রি ও বাঘিনী বেরিয়েছে বাতিঘর থেকে। প্রথমজনের বই বেরিয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে, পণ্ডিতের প্রযোজিত যাত্রাপালা নাম বইয়ের।

সাখাওয়াত টিপু, রেজা ঘটক আর কণ্ঠশিল্পী শেখ সাহেদ আলীকে দেখা গেল ইছামতি প্রকাশনীর সামনে আড্ডায় মগ্ন। ফরিদ কবির, ব্রাত্য রাইসু, পারমিতা হিমকেও দেখা গেল এখানে। সাহিত্যিকেরা আসছেন মেলায়।

রিমঝিম আহমেদের উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন হলো বাতিঘরের সামনে। বিস্ময়চিহ্নের মতো নাম সে উপন্যাসের। সেখানে বসেছিল কবি–সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। সেখানেই অনুবাদক জি এইচ হাবীবের সঙ্গে দেখা। তাঁর অনুবাদে ব্রিজিত ভাইনির লেখা ইংরেজি ভাষার ইতিহাস আজই এসেছে কথাপ্রকাশ থেকে, সে কথা জানাতে ভুললেন না। বাতিঘরেই ইআরকি প্রকাশনার আদনান মুকিতের লেখা ডিগবাজি বইটি পাওয়া যাচ্ছে। ময়ূরপঙ্খিতে মাহফুজ রহমানের গুল্টু, চৈতন্যয় আহমেদ খানের য পলায়তি স জীবতি পাওয়া যাচ্ছে।

মেলায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে হরিশংকর জলদাসের মনোজবাবুদের বাড়ি। প্রকৃতি এনেছে মনজুরে মওলার জোরে শ্বাস নাও। পাঠক সমাবেশ এনেছে জাহিদ হায়দারের প্রেমকে যখন বানিয়ে ফেলেছি খুনি। চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে সিরাজুদ্দীন হোসেনের মঞ্চে নেপথ্যে। অন্বেষা প্রকাশন এনেছে জসীমুদ্দিন মাসুমের ক্রান্তিকাল, মুক্তধারা এনেছে মশিউর রহমানের মায়াবী নীলাকাশ