আদালতে হাজিরা দিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে আগামী ৯ মার্চ। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম আজ সোমবার এই আদেশ দেন।

এর আগে আজ সকালে মতিউর রহমান আদালতে হাজির হন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এই মামলার শুনানির নতুন দিন ঠিক করেন।

আদালতে প্রথম আলো সম্পাদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, চৈতন্যচন্দ্র হালদার, সুমন কুমার রায় ও মিছিল বঙ্গবাসী। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর ফারুক আসিফ।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান। শুনানি নিয়ে দুই হাজার টাকা মুচলেকায় সেদিন জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম। জামিন শুনানিতে প্রথম আলো সম্পাদকের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি আদালতকে বলেছিলেন, ‘এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমানকে আগাম জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী জামিনের প্রার্থনা করছি। আর যে ধারায় এই অভিযোগ আনা হয়েছে তা জামিনযোগ্য।’

গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে করা মামলায় মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর প্রথম আলো সম্পাদককে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। জামিনের আবেদন করলে তা বিচারিক আদালতকে বিবেচনাও করতে বলেন উচ্চ আদালত।

একই সঙ্গে কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ অপর পাঁচজনকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার অভিযোগ গঠন বা অন্য কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত তাঁদের হয়রানি বা গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ছয়জনের আগাম জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেন। অপর চারজন হলেন প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক এবং কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম।

হাইকোর্টে প্রথম আলো সম্পাদকের পক্ষে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম বলেছিলেন, গত বছরের ১ নভেম্বর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ মাঠে কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান দেখতে নাইমুল সেখানে যায়। মামলায় বলা হয়, মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অথচ মঞ্চের পেছনের স্থানে কারও যাওয়ারই কথা নয়। অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যুৎ-সংযোগ স্থাপন অরক্ষিত ছিল। যে নিরাপত্তামূলক ও সাবধানতা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, তা নেওয়া হয়নি। কিন্তু বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা বড় বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানও করে থাকেন। ওই অনুষ্ঠানে সব ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা রাখা হয়। সেখানে জরুরি সেবা দিতে মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স ছিল।

গত বছরের ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরারের বাবা মজিবুর রহমান ঢাকার সিএমএম আদালতে নালিশি মামলা করেন। ওই দিনই মামলাটি আমলে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেদিন ঢাকার সিএমএম আদালত প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এই ১০ জনের অন্য চারজন হলেন ওই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মী।