ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন 'নিয়ন্ত্রিত' ছিল: সুজন

১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন নিয়ে আজ সোমবার নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরে সুজন। ছবি: প্রথম আলো
১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন নিয়ে আজ সোমবার নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরে সুজন। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন মূল্যায়ন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, দুই সিটির নির্বাচন ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত’। একটি প্রচার আছে যে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। সুজন মনে করে, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পেলে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর।

১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন নিয়ে আজ সোমবার নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরে সুজন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।

সুজনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই সিটি নির্বাচনে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীরা তুলনামূলক বেশি নির্বাচিত হয়েছেন। উত্তরে ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়লেও দক্ষিণে সেটা কমেছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে বিজয়ী প্রার্থীদের ৩৪ দশমিক ২৪ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বা স্নাতক–স্নাতকোত্তর। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বছর নির্বাচিতদের ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ স্বল্প শিক্ষিত অর্থাৎ এসএসসি বা তার নিচে। ২০১৫ সালে স্বল্প শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচিত ব্যক্তিদের ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ স্বল্প শিক্ষিত। ২০১৫ সালে স্বল্প শিক্ষিত বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন ৫১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এবার দক্ষিণে বিজয়ীদের ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ২১ দশমিক ১০ শতাংশ।

ঢাকা উত্তরে নির্বাচিত ৭৩ জনপ্রতিনিধিদের ৮৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ৬৩ জন ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে ব্যবসায়ী নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে দক্ষিণে নির্বাচিত ১০১ জনপ্রতিনিধির ৭৬ জন বা ৭৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে দক্ষিণে ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি ছিলেন ৮০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে ব্যর্থ, তা সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কমেছে, যা একটি অশনিসংকেত।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন ছিল নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে দৃশ্যমান কারচুপি হয়েছিল। এবার অদৃশ্য কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে কারচুপির তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল সুজন, এবারও তারা সেই দাবি জানাচ্ছে।

বদিউল আলম বলেন, ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেশি সম্পদশালীরা বেশি নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ আর ব্যবসায়ের রাজনীতিকীকরণ চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ভোটের মাধ্যমে জনগণকে অপমান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরাজয় মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। না হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা, সংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন—সব প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

সুজন তাদের প্রতিবেদনে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার কম হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরে। সেগুলোর মধ্যে আছে ভোট সুষ্ঠু হবে না—এমন পূর্ব ধারণা, ইভিএম নিয়ে সন্দেহ, দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হুমকি, ভোটকেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মীদের জটলা ও মহড়া, আঙুলের ছাপ না মেলায় অনেক ভোটারের ফিরে যাওয়া, একজনের ভোট অন্য জনে দেওয়া, একসঙ্গে দুদিন ছুটি থাকা ইত্যাদি।