৫০,০০০ টাকা ঋণ নিলেন, হাতে পেলেন ২৫,০০০ টাকা

টাকা। প্রতীকী ছবি
টাকা। প্রতীকী ছবি

হাওর উপজেলা মিঠামইনে ব্যাংক থেকে ঋণের পুরো টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের অনেকে ঋণের টাকা তোলার পর দালালের খপ্পরে পড়ছেন। এমন অভিযোগে এক দালালকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রাহকদের দাবি, এর সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত।

সম্প্রতি জনতা ব্যাংক মিঠামইন সদর বাজার শাখা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ তোলার পর অর্ধেক টাকা খুইয়েছেন মোহামিন নামের এক গ্রাহক। এ ঘটনায় তিনি কামাল হোসেন নামের এক দালালের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ কামালকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কামালপুর গ্রামের মৃত শব্দর আলীর ছেলে।

মামলা থেকে জানা যায়, কৃষক মোহামিন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জনতা ব্যাংকে মিঠামইন শাখায় গিয়ে ঋণের আবেদন ফরম তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকের লোকজন তাঁকে ফরম না দিয়ে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর ব্যাংক থেকে কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ব্যাংকের পরামর্শে তিনি কামালকে ব্যাংকের কর্মকর্তা ভেবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কামাল তখন ঋণের বিনিময়ে টাকা দাবি করেন। ঋণটা খুব প্রয়োজন বিধায় মোহামিন কিছু টাকা দিতে রাজি হন। কামাল জনতা ব্যাংক থেকে একটি ফরম তুলে ৫০ হাজার টাকা ঋণ চেয়ে মোহামিনের স্বাক্ষর নিয়ে নিজেই ফরমটি ব্যাংকে জমা দেন। ফরম পূরণের ৩ দিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি কামাল ফোন করে মোহামিনকে উপজেলার গোপদীঘি এলাকার চান মিয়াকে নিয়ে মিঠামইন বাজারে যেতে বলেন। মোহামিন কথামতো চান মিয়ার সঙ্গে মিঠামইন বাজারে গেলে কামাল ফোন করে তাঁদের একটি দোকানে যেতে বলেন। দোকানে গেলে কামাল জনতা ব্যাংকের একটি চেক বই মোহামিনের হাতে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন। তিনি কামালের কথামতো স্বাক্ষরের পর ৫০ হাজার টাকার চেকটি চান মিয়ার হাতে দিয়ে ব্যাংকে যান। সেখানে তাঁর আরেকটি স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপর চান মিয়া গ্রাহক মোহামিনকে নিয়ে আবার সেই দোকানে আসেন। সেখানে কামাল তাঁর (মোহামিন) হাতে জোর করে ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন।

এ ঘটনার পর মোহামিন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কামাল জনতা ব্যাংকের কেউ নন। তিনি জনতা ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়মিত জোর করে এভাবে টাকা রেখে দেন।

মোহামিন ছাড়াও আল আমিন নামের আরেক ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে এ রকম ভোগান্তির অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগ, দালালের মাধ্যমে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা রেখে দেওয়ার এ অপকর্মের সঙ্গে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ অন্য কর্মকর্তারা জড়িত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও অন্তত পাঁচজন ঋণগ্রহীতা অভিযোগ করেন, জনতা ব্যাংকের ঋণ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানিতে অতিষ্ঠ হাওরের অনেক কৃষক। কারও কারও ক্ষেত্রে ঋণের অর্ধেক টাকা রেখে দেওয়া হয়।

তবে মিঠামইন শাখা জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তুলিপ কুমার সাহা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তিনি একজন কৃষককে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০-৮৫ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার কামালের ব্যাপারে তিনি দাবি করেন, কামাল তাঁর গ্রাহক, মোহামিনও গ্রাহক। দুজনের মধ্যে কী হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কামালের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগসাজশ নেই দাবি করে তিনি বলেন, প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা তাঁর ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমে টাকা নেন। এখন মোহামিন কেন কামালের দোকান থেকে ২৫ হাজার টাকা নিলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির রব্বানী বলেন, কামালের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকে মধ্যস্থতা করে গ্রাহকদের তোলা ঋণের প্রায় অর্ধেক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে, কামাল এসব কাজ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে করে থাকেন।