সন্তান প্রতিপালনই বড় চ্যালেঞ্জ

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। পাশে বুয়েটের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে।  প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। পাশে বুয়েটের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে। প্রথম আলো

পেশা হিসেবে স্থাপত্য ও প্রকৌশলকে বেছে নিতে একজন নারীকে কয়েক ধাপে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। পারিবারিক বাধা থাকলেও মূল সমস্যা শুরু হয় বিয়ের পর। পরিবার ও পেশা সমন্বয় করতে গিয়ে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটে। তবে সন্তান লালন-পালন করাই এ ধরনের পেশাজীবী মায়েদের বড় চ্যালেঞ্জ। 

গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘নারী স্থপতি ও প্রকৌশলীর আগামী: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে স্থপতি ও প্রকৌশলীরা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে প্রথম আলোর আয়োজনে এই গোলটেবিলে সহযোগিতা করেছে সিমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেভেন রিংস্‌ সিমেন্ট। 

স্থপতি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে ছাত্রাবস্থা থেকেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী নাজনীন আরাকে। তিনি বলেন, বিবাহিত হওয়ায় ছাত্রাবস্থায় অ্যাসাইনমেন্টের গ্রুপে বন্ধুরা নিতে চায়নি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হরতালের দিন পরীক্ষা দিতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে উদ্যম, একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সফল হওয়া সম্ভব। 

সূচনা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, নারীরা একই সঙ্গে ঘরের ও বাইরের কাজ করছেন। নারী স্থপতিরা রাত জেগে নকশা তৈরি করছেন, প্রকৌশলীরা মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন। তবে এ সফলতার সঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

সেভেন রিংস্‌ সিমেন্টের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা গৌতম চ্যাটার্জি বলেন, নারীদের পরিচালনায় কাজের গুণগত মান বাড়ে। ফলে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নারী স্থপতি ও প্রকৌশলীরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। এ জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। 

পড়াশোনা শেষ করে চাকরি ও বিয়ে একই সময়ে করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রভাষক সীমিতা রায়। তিনি বলেন, নারী স্থপতি ও বাড়ির বউ—এই দুটি সত্তাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া ভীষণ চ্যালেঞ্জের। তখন কোনো একটিতে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। পেশায় গুরুত্ব দিতে হলে পরিবার বিশেষ করে স্বামীর সহায়তা খুব জরুরি। 

ডিজাইন, প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্স লিমিটেডের প্রকল্প সমন্বয়ক শেখ নওরিন লায়লা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক পড়া শেষ করে ডিগ্রি নেওয়াই বড় কথা নয়। কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে আত্মোন্নয়ন দরকার, যেখানে নারীরা ঘরসংসার সামলাতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এ সমস্যা কাটাতে নারীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ও স্কুলে শিশুদের রাখার ব্যবস্থা করা জরুরি। 

জুনক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এম শাহেদ বলেন, নারী স্থপতি ও প্রকৌশলীর চ্যালেঞ্জের শুরু পরিবার থেকে। এ সমস্যার সমাধানে ঘর থেকেই নারী-পুরুষের পার্থক্য ঘোচাতে হবে। 

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা খাত এখনো অবহেলিত বলে মন্তব্য করেন কেইমন্টো অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুরশীদ আলমেহের। তিনি বলেন, যেকোনো কাজের বাজেট, সময় ও গুণগত মান নির্ভর করে প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ওপর। এ খাতে এখনো নারীর সংখ্যা কম। তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কর্মঘণ্টার শিথিলতা এনে গুণগত কাজে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। 

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নন্দিনী আওয়াল বলেন, পারিবারিক কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাচ্চা দেখার কেউ নেই। অথচ চাকরি ও সন্তান প্রতিপালন—উভয় বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক নারীকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। 

এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া শারমিন বলেন, ভালো লাগা থেকে এই পেশায় পড়তে আসা। কিন্তু বাস্তবে অনেক সমস্যা রয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। তখন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নানান ধরনের জবাবদিহি করতে হয়।

মেধা ও সৃষ্টিশীলতার কোনো জেন্ডার নেই বলে মন্তব্য করেন মাতৃকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা আকতার। তিনি বলেন, আবাসন সংকট, যাতায়াত সমস্যা ও পারিবারিক বাধায় অনেক নারী স্থপতি কিংবা প্রকৌশলী ঝরে যান। 

গোলটেবিল বৈঠকটি সম্পাদনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।