উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদন বেড়েছে ১১ লাখ কেজি

উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে চা উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৯৬ লাখ কেজি, যা দেশের চা উৎপাদনের ১০ শতাংশ। এর বাজারমূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। আগের মৌসুমের চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ লাখ কেজি। 

পার্বত্য ও সিলেট অঞ্চলের পর তৃতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটও। একসময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পঞ্চগড়ের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। চা-বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান।

পঞ্চগড়ে প্রথম দিকে ক্ষুদ্র পর্যায়ে শুরু হলেও ২০০০ সালে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি এবং পরে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাগান পর্যায়ে চা-চাষ শুরু করে। 

চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র  জানায়, পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরুর পর ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষ শুরু হয়। পাঁচটি জেলায় নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ১৯টি বড় চা–বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৫৮টি নিবন্ধিত ও ৫ হাজার ২০০টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা–বাগানে (২৫ একর পর্যন্ত) রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৮০ দশমিক ৬৮ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে।

পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় এ পর্যন্ত ২৮টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ১৭টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানা চাষিদের কাছ থেকে সবুজ চা–পাতা কিনে চা তৈরি করে। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত এই চা নিলাম বাজারে (চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল) বিক্রি করেন চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা মালিকেরা।

মার্চ থেকে নভেম্বর মাস হলো চা উৎপাদনের মৌসুম। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর সারা দেশে তৈরি চায়ের উৎপাদন ৯৬ মিলিয়ন কেজি। এর মধ্যে শুধু উত্তরাঞ্চলে সবুজ চা–পাতা (কাঁচা) উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ২১ হাজার ৬৫১ কেজি। এ থেকে তৈরি চা (মেড টি) উৎপাদিত হয়েছে ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার কেজি, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৩২ লাখ কেজি বেশি।

২০১৮ সালে সবুজ চা–পাতা (কাঁচা) উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮১ কেজি এবং তা থেকে তৈরি চা (মেড টি) উৎপাদিত হয়েছে ৮৪ লাখ ৬৭ হাজার কেজি। ২০১৭ সালে সবুজ চা–পাতা (কাঁচা) উৎপাদিত হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৯ কেজি এবং তা থেকে তৈরি চা (মেড টি) উৎপাদিত হয়েছে ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি। ২০১৬ সালে সবুজ চা–পাতা (কাঁচা) উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৯৩ কেজি এবং তা থেকে তৈরি চা (মেড টি) উৎপাদিত হয়েছে ৩২ লাখ ৬ হাজার কেজি।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতিমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চাষের নানান রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়।