আমি ডিফারেন্ট, কথা কম, কাজ বেশি: মেয়র আতিক

জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাইফুল ইসলাম
জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

কম কথা বলা ও বেশি কাজ করা পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। সে ক্ষেত্রে নিজেকে তিনি অন্য রকম বলেও উল্লেখ করেছেন।

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে মেয়র আতিকুল এসব কথা জানান। আতিক বলেন, ‌‌‘আমরা কিন্তু কথা বলি। আমি আবার ডিফারেন্ট, কথা কম, কাজ বেশি করতে পছন্দ করি।’

মেয়রের এই পছন্দের কথা জানানোর আগে নাগরিক সংলাপে বক্তব্য দেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের সাবেক ডিন শহীদুল আমিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগরবিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম।

‘জলবায়ু পরিবর্তন, নগর দরিদ্রের আবাসন: নগর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপে বক্তারা ঢাকা শহরে বস্তিবাসীর অবস্থা, আবাসনসংকট, জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা, ঢাকার বাসযোগ্যতা হারানোসহ নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। কোনো ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব সমস্যা আরও বাড়বে বলেও তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যার কথা জানান একজন বস্তিবাসী ও একজন পথচারী নারী।

এরপর বক্তব্য দিতে শুরু করেন আতিকুল ইসলাম। আলোচনা অনুষ্ঠানটিকে তিনি কার্যকর বলে উল্লেখ করে বলেন, এই আলোচনা কাজে লাগবে। তিনি কড়াইল ও ভাষানটেক বস্তির জমি কোন মন্ত্রণালয়ে, এসব বস্তিতে থাকা মানুষের বৈশিষ্ট্য (হতদরিদ্র, দরিদ্র) কী, এসব পরিসংখ্যান থাকলে কাজ করতে সুবিধা হবে বলে জানান। ওই সময় বলেন, ‘আমরা কিন্তু কথা বলি। আমি আবার ডিফারেন্ট, কথা কম, কাজ বেশি করতে পছন্দ করি।’

নিজের ব্যবসায়িক সফলতার কথা বলতে গিয়ে মেয়র বলেন, ৪৮টি মেশিন ও ১১০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন সাড়ে ১২ হাজার মেশিন আছে। প্রায় ১৯ হাজার শ্রমিক তাঁর পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

মেয়র বলেন, তিনি অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ অন্যদের সঙ্গে অন্য আরেক দিন আলোচনা করে বস্তিবাসীর আবাসন–সমস্যার সমাধানে কী করা যায়, তা ঠিক করবেন।

বস্তিবাসী মানুষের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘বস্তিবাসী আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের ছাড়া আমরা এক দিনও চলতে পারব না। তাঁরা বেশি কিছু চাইছেন না, চাইছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই।’

বস্তিবাসী মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে মেয়র বলেন, সিটি নির্বাচনের ভোট শেষে (১ ফেব্রুয়ারি) ওই রাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বস্তিবাসীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন, যাতে বস্তিবাসীরা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক মূল্যে আবাসনের সুবিধা পান।

সংলাপে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র ভোট চেয়েছেন, আমরা তার বদলে মেয়রের কাছে নিরাপদ আশ্রয় চাইব। আপনি (মেয়র) দেবেন, না দিতে পারলে উচ্ছেদ করবেন না।’

প্রতিবছর ঢাকায় ছয় লাখ মানুষ আসে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, সে হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রতিবছর গড়ে তিন লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দেশের চার ভাগের একভাগ (দক্ষিণাঞ্চল) ডুবে যাবে। তখন ওই সব এলাকার মানুষ সমতলের দিকে আসবে। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে প্রতিবছর ঢাকা উত্তরেই চার-পাঁচ লাখ মানুষ আসবে, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র।

নাগরিক সংলাপে ঢাকা শহরে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের বস্তিবাসীর জন্য সরকারি উদ্যোগে আবাসন নিশ্চিত করা, দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী চালু করা, বিনা মূল্যে বিশেষ কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, বস্তিবাসীর জন্য সুপেয় পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করাসহ সাতটি দাবি জানানো হয়।

পবা, বারসিক ও কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের (কাপ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সংলাপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন রোকসানা হাফিজ, কাপের চেয়ারপারসন দিবালোক সিংহসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।