নবম শ্রেণি থেকেই বিষয়ভিত্তিক বিভাজন না রাখার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী

‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞানশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নবম শ্রেণি থেকেই বিষয়ভিত্তিক বিভাজন (বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য) তুলে দেওয়ার পক্ষে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটা না থাকাই ভালো। এসএসসির পরে গিয়ে যদি বিভক্ত হয়, সেটাই ভালো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবই পড়ুক। তারপর যেখানে সে মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে, সেটা করে নেবে। তাহলে অন্তত তাদের (শিক্ষার্থীদের) মেধা বিকাশের একটা সুযোগ হয়।

প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এখন সব সাবজেক্টই বিজ্ঞানভিত্তিক। সেটা ধীরে ধীরে চলেই এসেছে। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নেই।’

আজ বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক-২০১৮’ তুলে দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন। যাঁদের মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র ও ছাত্রী রয়েছেন ৮৮ জন। ২০১৭ সালে ১৬৩ জন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের (দেশে) ক্লাস নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে, সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকারই নাই। কারণ, এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টই তারা পড়তে পারে।’

স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও আগত বিশেষ অতিথিরা। ছবি: ফোকাস বাংলা
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও আগত বিশেষ অতিথিরা। ছবি: ফোকাস বাংলা

বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা নেই, কারণ, বিজ্ঞান না পড়ার ফলে অনেক বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আর আমাদের দেশে ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খান (পাকিস্তান আমলে) সরকারের সময় এটা করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যাকে আমরা যদি কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং প্রযুক্তিশিক্ষার মাধ্যমে সেইভাবে দক্ষ করে গড়তে পারি, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা তো কোনো দিন হবেই না বরং আমরা অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারব।’

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ টেকনোলজির শিক্ষার্থী মো. মোবারক হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শারমিন সুলতানা অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা আমরা বলছি। এখানেও আমাদের ছেলেমেয়েদের সেভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে এবং সেটা আরও বিকশিত হলে সেখানে আমাদের জনশক্তি লাগবেই।’

প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দেন।