স্বেচ্ছাসেবীরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারেন

ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহনকারীরা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তন, ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহনকারীরা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তন, ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার হাসরা মাজালিয়া গ্রামের তরুণ আতিফ আসাদ। আজ শুক্রবার যোগ দিয়েছিলেন ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০২০ উপলক্ষে ময়মনসিংহে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়। আতিফ আসাদ জানান, তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। এসবের ফাঁকে তিনি নিজের বাড়িতে একটি গণ পাঠাগার করেছেন। প্রথমে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিতেন। এরপর বাড়িতেই একটি ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠাগার গড়ে তোলেন। গ্রামের মানুষেরা বিনা মূল্যে এখানে বসে বই পড়তে পারেন। কারণ তাঁর চাওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষ আলোকিত হোক।

আতিফ আসাদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর প্রথম আলোর ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক দিবা সরকারের আহ্বানে উপস্থিত প্রত্যেকে দাঁড়িয়ে আতিফ আসাদের জন্য করতালি দেন। একজনের স্বেচ্ছাসেবার কাজকে অন্যজন উৎসাহিত করার যেন প্রতিযোগিতাই হয়ে গেল ভিএসও প্রথম আলো’র স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা বিষয়ক মতবিনিময় সভায়।

বিকেলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০২০ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহে কাজ করা অন্তত ২০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও শিক্ষক ও কবিসহ বিভিন্ন পেশার অন্তত ৫০ জন এ সভায় অংশ নেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কামরান পারভেজ। ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সাহিদা সনি সভাটি সঞ্চালনা করেন

মতবিনিময় সভায় বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘দেশটাকে আমি আমার ভাবি। তাই নিজের পেশাগত কাজের বাইরে বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষকতার জীবনের শুরুর দিকে একটি বিদ্যালয়ে দেখেছি শিশুরা অভুক্ত অবস্থায় আসত। আমি ওই শিশুদের জন্য স্থানীয় একটি হোটেলে খাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। অথচ আমার নিজের রোজগার ছিল সামান্য। মানুষের ইচ্ছা শক্তিই স্বেচ্ছাসেবার জন্য যথেষ্ট। নতুন প্রজন্মের স্বেচ্ছাসেবীরা একদিন বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারেন।’

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ রায়হান উদ্দিন নিজের ছাত্রজীবনে স্বেচ্ছা সেবার মাধ্যমে শহীদ মিনার ও কর্মজীবনে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে একটি স্কুলে প্রতিষ্ঠার গল্প শোনান।

স্বেচ্ছাসেবক আলী ইউসুফ বলেন, ১৯৭১ সালের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক। কারণ তাঁরা কেউ টাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। বর্তমান প্রজন্মের যাঁরা স্বেচ্ছাসেবক তাঁরা এ যুগের ‘মুক্তিযোদ্ধা।

মতবিনিময় সভায় নিজের স্বেচ্ছাসেবার গল্প শোনান ৫৯ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করা সানোয়ার হোসেন। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন, বিডি ক্লিন ময়মনসিংহের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মতিউর রহমান ফয়সাল, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী বৃক্ষমানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দীপক চন্দ্র দাস, কবি শামীম আশরাফ, আরাফাত রিলকে, ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মন্ডল, ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বর্তমান সভাপতি আবুল বাশারসহ আরও অনেকে।

বক্তারা বলেন, স্বেচ্ছায় তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহেও রয়েছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও কর্মী। তাঁরা রাস্তার আবর্জনা পরিষ্কারসহ নানা ধারণের সেবামূলক কাজ, রক্তদান এমনকি অনলাইনে তথ্যসেবাও দিয়ে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীরা কখনো অর্থ বা সম্মাননা পাওয়ার আশায় কাজ করেন না। তবু ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য সম্মাননার আয়োজন করেছে। সেটি সবার জন্যই আনন্দের খবর।

মতবিনিময় সভায় সম্মাননা পর্বে অংশ নেওয়ার জন্য করণীয়গুলোও বলা হয়। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য নির্দিষ্ট মনোনয়ন ফরম সরবরাহ করা হয়।