হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ: নির্ধারিত সময় শেষ, কাজ অসমাপ্ত

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজের নির্ধারিত সময়সীমা গতকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর দাবি, জেলায় বাঁধের কাজ গড়ে ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। যদিও হাওর আন্দোলনের নেতারা পাউবোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, হাওরে বাঁধের কাজ অর্ধেকের বেশি হয়েছে বলা যাবে না। কোনো কোনো হাওরে তার চেয়ে কম কাজ হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় এবার ৭৪৪টি প্রকল্পে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। ৬৩৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে এবার অর্থ বরাদ্দের চাহিদা আছে ১৩১ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রকল্পে একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) কাজ করছে। গত বছর ৫৭২টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ৮০ কোটি টাকা। এবার প্রকল্প ও অর্থ দুটোই বেড়েছে। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

 পাউবোর তথ্যমতে, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় বাঁধের কাজ হয়েছে গড়ে ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৩৮৯টি প্রকল্পে মাটির কাজ শেষ।

সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ হবে এটাই আমাদের দাবি ছিল। কিন্তু প্রশাসন ও পাউবো সেটি করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। তারা এখন যে হিসাব দিচ্ছে সেটাও সঠিক নয়। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাঁধের কাজ এখনো অর্ধেক বাকি আছে। আমরা দু–একদিনের মধ্যে সার্বিক চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করব। আমরা চাই দ্রুত কাজ শেষ হোক।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেছেন, এবার হাওর থেকে পানি বিলম্বে নামায় প্রকল্প নির্ধারণ ও কাজ শুরুতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে সব কাজ শেষ করা যায়নি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে সব প্রকল্পে মাটির কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও সপ্তাহখানেক লাগতে পারে। এ জন্য ১৫ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে।

প্রতিনিধি, ধরমপাশা, সুনামগঞ্জ জানান,  হাওরপাড়ের কয়েকজন কৃষকের অভিযোগ, প্রকল্প গঠন করা নিয়ে কৃষক সরকারি দলের সমর্থক কি না তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। বরাদ্দকৃত অর্থও সঠিক সময়ে পিআইসিদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি। ফলে দেরিতে কমিটি গঠনসহ নানাবিধ কারণে বাঁধের কাজও পিছিয়েছে।

প্রতিনিধি, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। কয়েকটি প্রকল্পে এখনো মাটি পড়েনি। ফলে স্থানীয় কৃষকেরা শঙ্কিত রয়েছেন।

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের পোল্ডার-১ আওতাধীন ২ নম্বর প্রকল্পের হরিনাকান্দি থেকে মনাইখালি নামক এলাকার অধিকাংশ স্থানে এখনো মাটি পড়েনি। এ প্রকল্পের ১ দশমিক ০৫৯ কিলোমিটার মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ টাকা।

একই হাওরের ১০নং প্রকল্পের কাজ চলছে। ১১ নম্বর প্রকল্পের সালিকা থেকে ডুমাখালি সংলগ্ন স্থান পর্যন্ত মাটির কাজ শেষ হয়নি। ১২ নম্বর প্রকল্পের ডুমাখালি নামক স্থানেও মাটি পড়েনি।

১১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি আব্দুস শহিদ এবং ১২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি মফিজ মিয়া জানিয়েছেন, হাওরে মাটির তীব্র সংকট। অনেক চেষ্টার পর দূরবর্তী এলাকা থেকে মাটি আনতে হচ্ছে।