বাবা আর ছেলের অন্য রকম দ্বন্দ্ব

ছেলের ভাষ্য, বাবা তাঁকে জমিজমা থেকে ঠকিয়েছেন। এমনকি অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন। আর বাবার ভাষ্য, ছেলেকে তিনি ন্যায্য হিস্যা দিয়েছিলেন। তবে সে সব বিক্রি করে দিয়েছেন। সম্পত্তি নিয়ে বাবা-ছেলের এই বিরোধ গড়িয়েছে অনেক দূর। পাল্টাপাল্টি মামলায় দুই পক্ষই এখন সর্বস্বান্ত। ছেলে বলছেন, তিনি ভয়ে রাতে পরিবার নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। আর বাবার কথা, তিনি ভয়ে এলাকাই ছেড়ে দিয়েছেন।

বাবা-ছেলের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের ঘটনা ময়মনসিংহের নান্দাইলের। ছেলের নাম মো. মাজহারুল হক। আর বাবার নাম আবদুল হাই। তাঁদের বাড়ি উপজেলার আগ মুশলি গ্রামে।

মাজহারুল হক গতকাল শুক্রবার সকালে নিজ বাড়ির উঠানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লুৎফা আক্তার। লুৎফাই বেশির ভাগ বক্তব্য তুলে ধরেন।

লুৎফা আক্তার বলেন, তাঁর শ্বশুর আবদুল হাইয়ের প্রথম পক্ষের সন্তান মাজহারুল হক। দেড় বছর বয়সে মাজহারুলের মা মারা যান। এরপর তাঁর শ্বশুর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সন্তান হিসেবে মাজহারুলের বাবার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় আবদুল হাই তাঁকে বঞ্চিত করেছেন। ১ হাজার ১০০ শতক জমি দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানকে লিখে দিয়েছেন তিনি। এ নিয়েই দ্বন্দ্বের শুরু। 

এই পক্ষের ভাষ্য মোতাবেক, গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক মাজহারুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাঁকে নেত্রকোনা থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় লুৎফা নান্দাইল মডেল থানায় মামলা করেন। এতে তিনি শ্বশুর, সৎশাশুড়ি ও এই পক্ষের সন্তানদের পাশাপাশি বহিরাগত ও ভাড়াটে ১৫ জনকে আসামি করেন। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (১৭৫ তাং ২৭/০৬১৯ ইং) দাখিল করেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লুৎফা বলেন, মামলাটি তুলে নিতে প্রথমে তাঁর ও তাঁর স্বামীকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতে একাধিক মামলা করা হয়েছে। হুমকি প্রদানসহ নানাভাবে তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে তাঁরা রাতে বাড়িতে থাকতে পারছেন না।

এই দম্পতির বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনস্থলে স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে মাজহারুল হক বলেন, ‘ন্যায্য হিস্যা থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন যদি নিজ বাড়িতে বসবাস করতে না পারি, তাহলে বেঁচে থেকে কী লাভ?’

অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে বাড়িতে গিয়ে আবদুল হাই ও তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার পর থেকে তাঁরা এই বাড়িতে থাকেন না। এখন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে থাকেন। অনেক চেষ্টার পর আবদুল হাইয়ের একটি মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নম্বরে ফোন দিলে ধরেন আবদুল হাই। তবে এই প্রতিবেদকের নাম-পরিচয় জানার পর তিনি কথা বলতে রাজি হন।

ছেলে মাজহারুল হকের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবা আবদুল হাই বলেন, ‘আমি মাজহারুলকে ৭০০ শতক জমি লিখে দিয়েছিলাম। পরে সব জমি বিক্রি করে দিয়েছে সে। এখন আমার জমিজমা তো আর মাজহারুলের একার প্রাপ্য নয়।’ পরিবার নিয়ে মাজহারুলের বাড়িতে থাকতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল হাই বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আমাকেই তো সে বাড়িছাড়া করেছে। মাজহারুল এখন একাই বাড়িতে রাজত্ব করছে। আর আমি পথে পথে ঘুরছি।’